নয়াবার্তা প্রতিবেদক : অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার দাবি জানিয়েছে ৯টি সংগঠন নিয়ে গঠিত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন বাস্তবায়ন জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেল। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে এই সেলের দাবি, আইনটি ক্ষমতাসীনদের ব্যক্তিগত হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কমপক্ষে ১ হাজার ৪২৪ জনকে এই আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮১ শতাংশ মামলাই করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সমন্বয় সেলের আয়োজনে ‘সংখ্যালঘু ও সাংবাদকর্মী : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে নির্বিচারে নাগরিকদের গ্রেপ্তার করা হয়, তা সর্বজনবিদিত উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৮ সালের গোড়া থেকে এই আইন প্রণয়ন এবং তার ব্যবহারের হিসেবে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ক্ষমাতাসীনদের অপছন্দের ভিন্নমত প্রকাশের কারণে এই আইনে গ্রেপ্তার না হওয়াই এখন এক ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) পৃষ্ঠপোষকতায় করা গবেষণাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কমপক্ষে ১ হাজার ৪২৪ জনকে এই আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ সময় করা মামলাগুলোর ৮১ শতাংশ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের হয়রানি ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে এই আইনকে বারবার ব্যবহার করা হয় বলেও দাবি করেছে সংগঠনটি। তারা বলেন, বর্তমানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটি পরিচিত কৌশল হচ্ছে ফেসবুকে মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অজুহাতে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, আগুন লাগানো ইত্যাদি। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, যার নামে ফেসবুকে কথিত স্ট্যাটাস দেওয়ার কথা বলা হয়, পুলিশ তার বিরুদ্ধেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে দ্রুত গ্রেপ্তার করে এবং এখন বেশিরভাগ ঘটনার তদন্ত হয় না। তদন্ত শুরু হলেও শেষ হয় না এবং প্রকৃত অপরাধীরা কখনও আইনের আওতায় আসে না। এ ধরনের ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগ, তারা নিরপরাধী হয়েও লম্বা সময় জেল খেটেছে কিংবা নিখোঁজ হয়েছেন।
আলোচনা সভায় অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করাসহ সাতটি দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো:-
১. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে যাদের নিপীড়ন করা হয়েছে বা যারা হয়রানির শিকার হয়ে জেলে আছেন, সেসব সংবাদকর্মী, সংখ্যালঘু ও অন্যান্যদের অবিলম্বে মুক্তি এবং যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
২. নওগাঁর ভূমি কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের র্যাব হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যুর বিষয়ে উচ্চ বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে এবং তাদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৩. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে যারা নিপীড়নমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন, তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিচারের আওতায় এনে যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. সংবিধানসম্মত বাকস্বাধীনতা ও তথ্যপ্রকাশের আইনগত অধিকার চর্চায় বাধা প্রদান করে কোনো আইন পাস করা যাবে না মর্মে সরকারকে অঙ্গীকার ঘোষণা করতে হবে।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে যাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে, প্রথম আলোর সম্পাদকসহ সব সম্পাদক, সংবাদকর্মী এবং অন্যদের বিরুদ্ধে করা সব ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৬. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করতে হলে একাধিকবার সংবাদপত্রের সম্পাদক, সাংবাদিক প্রতিনিধিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে অর্থপূর্ণ আলোচনা এবং সম্মতির ভিত্তিতে তা করতে হবে।
৭. ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে যখন তখন কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যাবে না।
আলোচনা সভায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা রানা দাশগুপ্ত, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী তবারক হোসাইন, সুব্রত চৌধুরী, পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ বক্তব্য দেন।