নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : ঢাকার দেউলিয়া আদালতের ৪/৯৯ নং মামলার নিলাম কার্যক্রম এবং দখল হস্তান্তরের আদেশ কেন বাতিল করা হবেনা তা জানতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ আজ এক রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে দেউলিয়া আদালত কর্তৃক অনুমোদিত নিলামের কার্যক্রম স্থগিত আদেশ সহ বিবাদীদের বিরুদ্ধে নিষেধাঙ্গা জারি করেছেন।
আইমন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার দেউলিয়া বিষয়ক আদালত, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক,সরকারি রিসিভার ও নিলাম গ্রহীতার প্রতি আদালত এই আদেশ সহ নিষেধাঙ্গা জারি করেছেন।
বিচারপতি আশফাকুর রহমান ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ্যাডভোকেট মোঃ আমিমুল এহসান জুবায়ের রিট পিটিশনটি দায়ের করেন। রিট শুনানীতে অংশ নেন ব্যারিস্টার জিয়াউল হক।
রিটকারি এ্যাডভোকেট মোঃ আমিমুল এহসান জুবায়ের জানান, মুল পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করেই আদালতে নিলাম কার্যক্রম পরিচালনাকারী রিসিভার কর্তৃক দু’টি জাতীয় দৈনিকে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে মর্মে ঐ দু’টি পত্রিকার ভুয়া নিলাম বিজ্ঞপ্তির সত্যায়িত ফটো কপি জমা দিয়ে ভূয়া নিলামে মৃত মুক্তিযোদ্ধার অসহায় স্ত্রীর ১০ কোটি টাকার সম্পদ ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। এই ভূয়া নিলাম জালিয়াতির ঘটনায় আড়াই কাঠা ভূমিতে নির্মিত ৬ তলা ভবনের কথা গোপন করে শুধু মাত্র ভূমি নিলাম করা হয়। ভূমি এবং ভূমির উপর নির্মিত ভবনের আংশিক দখল নিলাম গ্রহীতার অনুকুলে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
তিনি জানান , এই ঘটনাটি ঘটে ঢাকার ৩৬/২ কাকরাইলে। মেসার্স নিয়াজ গার্মেন্টস এর অনুকুলে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক থেকে ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ঋণ প্রদান করে। এই ঋনের অনুকুলে কোম্পানী কাফরুল থানার এক জমি ব্যাংকের অনুকুলে মটগেজ প্রদান করেন। পরবর্তীতে কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়। ফলে সময় মত ঋন পরিশোধ না করায় ব্যাংক অনাদায়ী ঋণের সুদাসল ৫৩ লাখ ২২ হাজার টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ে ১৯৯৯ সালে কোম্পানির বন্দককৃত জমি নিলাম করে টাকা আদায়ের চেষ্টা না, করে কোম্পানী ও তার পরিচালকদের দেউলিয়া ঘোষনা করতে ঢাকার দেউলিয়া আদালতে ৪/৯৯ নং মামলা দায়ের করেন। ব্যাংক কর্তৃপ তাদের মামলায় ঐ কোম্পানির ৪০% শেয়ার হোল্ডার রোকসানা পারভীনের বসত বাড়ীটিই শুধু দেউলিয়া আদালতের বি তপশিল দেখান। কিন্তু অন্য পরিচালকদের কোন সম্পত্তির বিবরণ দেননি। অবশেষে ২০০৮ সালে কোম্পানি ও তার ৪ জন পরিচালককে দেউলিয়া ঘোষনা করা হয় এবং অসহায় ঐ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রোকসানা পারভীনের বি তপসিল বর্ণিত সম্পত্তি বিক্রয় করে ব্যাংকের টাকা আদায়ে অবসর প্রাপ্ত জেলা জজ সুলতান আহম্মেদ মিঞাকে রিসিভার নিয়োগ করা হয়। রোকসানা পারভীনের স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা বাহিনীর অবসর প্রাপ্ত মেজর, কাজী মাজেদুর রহমান ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর মারা যাওয়ার পর রিসিভার অসহয় ঐ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বি তপসিল বর্ণিত সম্পত্তি নিলামে বিক্রয় করার জন্য ১৩ মে ২০১৫ তারিখের জাতীয় দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক খবর পত্রিকায় নিলাম দরপত্র আহবানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবার কথা আদালতে উল্লেখ করেন। অথচ বর্ণিত তারিখের উল্লেখিত দু’টি পত্রিকায় এ ধরনের কোন নিলাম দরপত্রের বিজ্ঞপ্তিই প্রকাশিত হয়নি। উপরন্ত এই জাল জালিয়াতির নিলামে ঐ আড়াই কাঠা সম্পত্তির উপরে থাকা ভবনের কথা গোপন করে কারসাজির মাধ্যমে ১০ কোটি টাকার সম্পদ ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় নিলাম বিক্রয় আদালতের মাধ্যমে সম্পন্ন করে নিলাম গ্রহিতার অনুকুলে ঐ আড়াই কাঠা জমি হস্তান্তর বাবদ ঢাকা সাব রেজিঃ অফিসে ১৮১৩/১৬ নং দলিল সম্পাদন করেন। ঐ দলিলেও ৬ তলা ভবনের কথা গোপন করা হয়। রিসিভার গত ২০১৭ সালের ২১ জুন তারিখে নিলামকৃত জমির দখল নিলাম গ্রহিতার অনুকুলে বুঝিয়ে দিতে এসে ৬ তলা ভবনটিসহ দখল বুঝিয়ে দেন।
এ্যাডভোকেট মোঃ আমিমুল এহসান জুবায়ের জানান, তার মক্কেল রোকসানা পারভীন গত ২ মে ৫০৩৮/৯৯ নং রিট দয়ের করলে আদালত আজ এই রায় দেন।