গাজী আবু বকর : সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ঢাকা কাস্টমস হাউস ৬ হাজার ১০২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে। এই অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ জানান, ডলার সঙ্কটের কারণে সারা বছরে আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮৪১ কোটি টাকা কম আদায় হলেও আগের অর্থবছরের চেয়ে আদায়ের পরিমাণ ছিলো ১০৭ কোটি টাকা বেশী। তিনি জানান, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিলো ৫ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা।
উপ কমিশনার পারভেজ রেজা জানান, নতুন ইউনিট গঠন, শিফট বাড়িয়ে কর্মকর্তাদের কর্মঘন্টা কমানো, পন্যের বাজার যাচাইকরণ করে শুল্ক নির্ধারণসহ অভ্যন্তরীন নানা সংস্কার করার ফলে আমদানী পণ্য কমলেও রাজস্ব আদায়ে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে ঢাকা কাস্টমস হাউস। ডলারের মুল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানী পণ্য কমে গেলেও রাজস্ব আদায়ের গতি চলমান রয়েছে। বিশেষ করে নতুন কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ যোগদানের পর বেশকিছু অভ্যন্তরীণ সংস্কারের ফলে বদলে যাওয়া ঢাকা কাস্টমস হাউস সাফল্য অর্জন করছে। তাঁর মতে, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্র ও বাস্তবায়নে অন্যান্য কাস্টম হাউসের তুলনায় ঢাকা কাস্টমস হাউস প্রথমস্থানে রয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরের রাজস্ব আদায় ১০৭ কোটিরও বেশি। অভ্যন্তরীণ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি মনে করেন।
ঢাকা কাস্টমস হাউস সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়াতে বেশকিছু সংস্কার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে এয়ারফ্রেইটে (আমদানী কার্গো) পূর্বে একজন উপ-কমিশনার থাকলেও বর্তমানে দুইজন উপ-কমিশনার কাজ করেন। এতে করে কাজের গতি বেড়েছে। পুর্বে আমদানী পণ্যের ওপর ৯টি গ্রুপ ছিল। আর এখন ১৯টি গ্রুপে বিভক্ত করে একজন করে রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যার ফলে আমদানী পন্যেও দ্রুত শুল্কায়ন সম্ভব হচ্ছে। পণ্যের বর্তমান বাজার মূল্যের ওপর শুল্কায়ন করার কারণেও রাজস্ব বেড়েছে। ঢাকা কাস্টমস হাউজে বাণিজ্য সুবিধার জন্য কার্গো কমপ্লেক্সে দুইটি গেট করা হয়েছে একটি কমার্শিয়াল পণ্যের গেট আরেকটি ইন্ড্রাসিয়াল পণ্যের গেট। বিমানবন্দরে আগে ৩ শিফট থাকলেও বর্তমানে ৪টি শিফট করা হয়েছে। এতে করে কর্মকর্তাদের কর্মঘন্টা কমে গেছে। তাদের কাজের উদ্যোমও বেড়েছে। এছাড়াও এন্টি মানি লন্ডারিং ইউনিট গঠন করা হয়েছে। যার কারণে শুল্ক ফাঁকি বা টাকা পাচারের চেষ্টাও কমে গেছে।
ঢাকা কাস্টমস হাউস সূত্র জানায়, পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। আগে মাঝে মধ্যে পন্যের শুল্কায়ন ছাড়াই বের হয়ে যেত। নজরদারী কম ছিল। কিন্তু সেই সুযোগও একেবারে কম। যার কারণে রাজস্ব আদায়ের যে গতিধারা সেটি অব্যাহত রয়েছে। আর এসব সিদ্ধান্ত এসেছে নতুন কমিশনার যোগদানের পর থেকে। জানা গেছে, বর্তমানে ডলার সঙ্কট রয়েছে। এছাড়াও ডলারের দামও চড়া। আবার আমদানীর ব্যাপারে সরকারের নতুন করে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। এ কারণে পণ্যের আমদানীও কমে গেছে। সঙ্গতকারণে আমদানী পণ্যের ক্ষেত্রে দেশের রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রেক্ষাপট বলছে আমদানী পণ্য কমলেও রাজস্ব আদায়ের যে গতিধারা তা সঠিক রয়েছে। টার্গেট যাই নির্ধারণ করুন যদি তার ৮০ ভাগ অর্জিত হয় সেটিও সফল। তবে ঢাকা কাস্টম হাউসের টার্গেট ৯০ ভাগের ওপর অর্জিত হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে কাস্টম হাউসের রাজস্ব আয়ের এমন রেকর্ড দেশের অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। চোরাচালান বন্ধ, জালিয়াতি ও শুল্ক ফাঁকি রোধে কাস্টমসের নানান উদ্যোগের কারণে রাজস্ব আদায় বেড়েছে বলে মনে করছেন তারা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্প্রতি এ ধরনের বেশ কয়েকটি চালান ধরা পড়েছে। একটি চক্র মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। অর্থপাচারের ঘটনাও ঘটছে আমদানি-রফতানির মাধ্যমে। এসব প্রবণতা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা গেলে রাজস্ব আদায়ে আরও গতি আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, দেশে অব্যাহত ডলার সঙ্কট, বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নানা বিধি-নিষেধসহ বহুমুখী চাপের মধ্যেও রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক ধারা বজায় রেখেছে ঢাকা কাস্টম হাউস। অব্যাহতভাবে আমদানি কমছে, বিশেষ করে অধিক শুল্ক আদায় হয় এমন পণ্যের আমদানি কমে গেছে। এরপরও রাজস্ব আহরণ প্রতিবছর বাড়ছে।