নয়াবার্তা ডেস্ক : ঢাকা কাস্টম হাউসে শুল্ক না দিয়েই পার হয়েছে কোটি টাকার চালান। রাষ্ট্রায়ত্ত তিন সংস্থাকে বোকা বানিয়ে দিনদুপুরে কোনো ধরনের নথিপত্র ছাড়াই ট্রলিতে করে কোটি কোটি টাকার পণ্য চালান নিয়ে গেছে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান সাহা এন্টারপ্রাইজ। শুল্কায়নের কোনো নিয়ম না মেনে সরকারের কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দিনদুপুরে ট্রলি ঠেলে পণ্য চালান নিয়ে বেরিয়ে যায়। ঢাকা কাস্টম হাউস, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং বিমান বাংলাদেশের ওয়্যার হাউসের কর্মকর্তাদের সামনে দিয়ে পণ্য চালান খালাস করা হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এই জালিয়াতির ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার দুপুরে। মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে প্রায় ১৩৯ কার্টুন পণ্য নিয়ে যায় সিঅ্যান্ডএফে। এই ঘটনার তদন্ত করতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। সেইসঙ্গে পণ্য চালানের অবস্থান জানতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওয়্যার হাউস ইনচার্জের কাছে জানতে চেয়েছে ঢাকা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত সোমবার দুপুর ১টা থেকে ২টার দিকে ঢাকা কাস্টম হাউসের টার্মিনালের অভ্যন্তরে জালিয়াতির প্রক্রিয়া শুরু করে সিঅ্যান্ডএফের লোকজন। দুপুরের খাবারের সময় অর্থাৎ দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে রিপ্যাকিং করে। টার্মিনালে সেবাগ্রহীতা এবং কর্মকর্তাদের ভিড় কমলে দুপুর ২টা ৩৯ মিনিট থেকে ২টা ৪৯ মিনিটের সময় ডেলিভারি প্রক্রিয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে প্রায় ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ১৩৯ কার্টুন মোবাইল এলসিডি বের করে নিয়ে যায় সিঅ্যান্ডএফের লোকজন। ঢাকা কাস্টমসের এসটি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আবু রাসেলের নেতৃত্বে প্রিভেন্টিবের দুজন রাজস্ব কর্মকর্তা এবং শুল্ক গোয়েন্দার দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার চোখের সামনে ঘটে এমন জালিয়াতির ঘটনা। কিন্তু কোনো কর্মকর্তাই নথিপত্র ছাড়া এই পণ্য চালানের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ ছাড়া বিমানের ওয়্যার হাউসের কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে কোনো টুঁ শব্দ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ বলেন, পণ্য চালানের অবস্থান জানতে চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওয়্যার হাউসের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই চালানে সরকারের পাওনা প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা সিঅ্যান্ডএফ থেকে গতকাল মঙ্গলবার আদায় করেছি। এবার পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জাল-জালিয়াতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নিতে অটল থাকবে ঢাকা কাস্টম হাউস বলেও জানান তিনি।
পণ্য চালানের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, শুরু থেকেই পণ্য চালানে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে সাহা এন্টারপ্রাইজ। চীন থেকে আমদানি করা মোবাইল এলসিডি কাস্টমসের এসআইকুডা সফটওয়্যারে এলসি ছাড়া সাবমিট করা হয়েছে। সফটওয়্যারের হ্যাশ ডকুমেন্ট এবং এয়ারওয়ে বিলেও জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকের নাম উল্লেখ করলেও এলসি উল্লেখ করা হয়নি। সেই সঙ্গে মূল্য ঘোষণায়ও নেওয়া হয়েছে মিথ্যার আশ্রয়। দেড় টনের এই পণ্য চালানের মূল্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হয় প্রায় ১৬ লাখ টাকা। কিন্তু এই পণ্য চালানটির প্রকৃত মূল্য ১ কোটি ৬৮ লাখেরও বেশি। এতে সরকারের রাজস্ব আসে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, ঢাকা কাস্টমসে নথিপত্র ছাড়া বেরিয়ে যাওয়া এই পণ্য চালানের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছি বলেও জানান তিনি।
নথিপত্র ছাড়া কীভাবে পণ্য চালান বেরিয়ে যায়, এ বিষয়ে বিমানের ওয়্যার হাউসের ইনচার্জ জে টি খানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।