তত্ত্ববধায়ক সরকারকে স্বাগত জানালো বিশ্ব

সহযোগিতা দেবে জাতিসংঘ

বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকারকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ স্বাগত জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), চীন ও ভারত বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ও পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো উপায়ে সহযোগিতা দিতে এই সংস্থা প্রস্তুত আছে।

গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা বন্ধে ড. ইউনূসের আহ্বানকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ড. ইউনূস বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ তৈরি করতে চায়। তাই আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার কূটনীতিক হেলেন লা ফাভে উপদেষ্টাদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান ম্যাথু মিলার।
এদিকে, বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে ইইউয়ের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ইইউ বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের জটিল এ কাজে তাদের সহায়তা করা হবে ও এই প্রক্রিয়া অবশ্যই শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।

অন্যদিকে, শুক্রবার চীন ও ভারতও জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানায়। বিনিময় ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এই সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ছাত্রজনতার নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। ওইদিন বিকেলেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। শান্তিতে নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ এই সরকারে আছেন ১৭ জন।

গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পর বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ১৩ জন উপদেষ্টাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। উপদেষ্টাদের তিনজন ঢাকার বাইরে থাকায় তারা এদিন শপথ নিতে পারেননি।

জাতিসংঘ: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জনগণ প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো উপায়ে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে জাতিসংঘ। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সংস্থার মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক এ কথা বলেছেন। ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কি না বা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কি না।

জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র বলেন, ‘তিনি (মহাসচিব) তাঁর (ড. ইউনূস) সঙ্গে কথা বলেননি। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত আবাসিক সমন্বয়ক আজকের (বৃহস্পতিবার) শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া যেন শান্তিপূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করতে তিনি ও কান্ট্রি টিম সক্রিয় রয়েছে।’

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস মাত্রই শপথ নিয়েছেন। তাঁর বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের কোনো বক্তব্য আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। জবাবে উপমুখপাত্র বলেন, ‘আপনারা শুনেছেন যে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠনের প্রত্যাশার কথা আমরা বলে আসছি। আমরা নিশ্চিতভাবেই সেই প্রত্যাশা করে যাব।’ বাংলাদেশে সহিংসতা কমে আসা ও জনসাধারণের কাছ থেকে বেশি মাত্রায় সংযত আচরণ ভালো লক্ষণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে সরকার পতনের আন্দোলন চলাকালে কয়েক শ মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা চাওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন অপর এক সাংবাদিক। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের বক্তব্য জানতে চান তিনি। জবাবে মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক বলেন, বাংলাদেশের নতুন সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘকে কী ধরনের অনুরোধ জানানো হয়, তা তাঁরা দেখবেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করবে, আমরা অবশ্যই যেকোনো উপায়ে তাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।’

বাংলাদেশে হিন্দুসহ অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হামলা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের কোনো প্রতিক্রিয়া বা বক্তব্য আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। জবাবে মহাসচিবের উপমুখপাত্র বলেন, ‘ভালো কথা। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশে যেসব সহিংসতা হচ্ছে, তা কমিয়ে আনা হোক, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। নিশ্চিতভাবেই যেকোনো ধরনের বর্ণবাদী আক্রমণ বা বর্ণভিত্তিক সহিংসতায় উসকানির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।’

Share