দেশে ধনী-গরীবের বৈষম্যে রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে ধনী-গরীবের বৈষম্য মধ্যে রেকর্ড হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৮ সালের প্রকাশিত প্রতিবেদনে ধনী-দরিদ্র বৈষম্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এই তালিকায় বাংলাদেশের সামনে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভারত রয়েছে। বাকি তিনটি দেশ হলো আফ্রিকার নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও ইথিওপিয়া।

এই প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে চরম দারিদ্র সীমান নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা দুই কোটি ৪১ লাখ। মোট ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে চরম দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের ধৈনিক ১.৯ ডলার (প্রায় দেড়শ টাকা) টাকার কম। যদিও বাংলাদেশে সাম্প্রতিক দশগুলোতে দারিদ্রের পরিমান উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরোর তথ্য মতে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ছিল ৪৪.২ শতাংশ। যা ২০১৬-১৭ সালে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

নিউইয়র্ক ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ওয়েলথ-এক্স এর প্রতিবেদনে বলা হয়ছে ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের অবস্থান হবে বিশ্বে তৃতীয়। যাদের কাছে এক থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার আছে তাদেরকে ধনী হিসেবে ধরা হচ্ছে।

‘হাই নেট ওয়ার্থ হ্যান্ডবুক-২০১৯’ নামে এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল সময়ে দেশের সমন্বিত বার্ষিক জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়বে শতকরা ১১.৪ ভাগ। ধনী মানুষের সংখ্যার দিক থেকে আর মাত্র চারটি দেশ তাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধি দুই অংকে পৌঁছাবে। এর শীর্ষে রয়েছে নাইজেরিয়া। সেখানে এই হার শতকরা ১৬.৩ ভাগ। তার পরেই রয়েছে মিশর। সেখানে এই হার শতকরা ১২.৫ ভাগ। এরপরই বাংলাদেশ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ইউসিএনিউজ ডটকমকে বলেন, এটা সত্য বাংলাদেশ দুর্বল অর্থনীতি থেকে দ্রুত টেকসই অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে সম্পদের বণ্টন এখানে যথেষ্ট স্বচ্ছ নয় এবং বৈষম্য এখনো অনেক উচ্চমাত্রায়। এখানে অবৈধ এবং অনৈতিক উপায় গ্রহণ করে ধনী হওয়ার প্রবণতাও রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শ্রমিকশ্রেণির জন্য ন্যূনতম মজুরি, শুধু ট্যাক্সেশন নীতি, সামাজিক খাতের ব্যয় এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য এখনও বাংলাদেশকে এগিয়ে যাওয়ার একটি দীর্ঘ পথ রয়েছে।

তিনি যোগ করেন, অর্থনৈতিক সাফল্য গল্পটি বৈষম্যের বৃদ্ধি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়, যা বিপজ্জনক। কোনও অগ্রগতি টেকসই হতে পারে যদি আমরা সম্পদের বৈষম্য কমিয়ে ফেলতে ব্যর্থ হই।

খুলনার ক্যাথলিক চ্যারিটি ক্যারিটাসের রিজিওনাল ডিরেক্টর জীবন ডি দাসও এমনটিই মনে করেন। তিনি বলেন, দুটি প্রতিবেদনেই বাংলাদেশের বাস্তবতার প্রতিফলন আছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে অপরাধমূলকভাবে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে। যেখানে দরিদ্ররা বৈষম্যের মধ্যেই আছে। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই একই অবস্থা।

কিছু ধনী মানুষ যে সৎভাবেও অর্থ আয় করছে সেকথাও তিনি স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, যারা বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে তারা দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান ইত্যাদি উপায়ে করে থাকে। তারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে ধরাছোয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের সামসুল আলম বলেন, সরকার দারিদ্র দূরীকরণ ও বৈষম্য কমিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের মতো নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের জন্য দারিদ্র্যসীমা থেকে উত্তোরণ খুবই কঠিন। তবে ২০২১ সাল নাগাদ সরকার সামাজিক আর্থ-সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন ও ২০৩০ সাল নাগাদ দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Share