নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় মনে করেন,করোনার কোপে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন অবরুদ্ধ অবস্থা চলছে। মানুষের জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে প্রবাসী আয়, পণ্য রপ্তানি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে বিপদে আছে দেশ। পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এমন ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণে সরকার বড় আকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় বেসরকারি খাতের নেতা, উদ্যোক্তা ও শীর্ষ নির্বাহীরা সন্তুষ্ট। তাঁরা মনে করেন, করোনার প্রভাব কাটাতে মানুষের জীবন-জীবিকা, ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, এসএমই খাত এবং কৃষি ও শিল্পের উৎপাদনশীলতায় জোর দিতে হবে। তাঁদের আশা, সম্মিলিত উদ্যোগে কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যবসা-বাণিজ্য আবার স্বাভাবিক হবে, অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে।
করোনার কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমও বন্ধ আছে। এতে প্রতিদিন প্রায় ৪০ কোটি ডলারের মতো ক্ষতি হচ্ছে। রোগের সংক্রমণ কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে, তা এখনো আমরা বলতে পারি না। তাই এ মুহূর্তে তিনটি কাজ করতে হবে, তা হলো রোগের সংক্রমণ যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখা, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি যতটা সম্ভব সচল রাখা ও রপ্তানিকারকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া। এর মধ্যে রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণই এখন প্রধান কাজ। কারণ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুব বেশি শক্তিশালী নয়। তাই সংক্রমণ আরও বাড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টার পাশাপাশি অর্থনীতি সচল রেখে কর্মহীন মানুষদের সহায়তা করতে হবে। আমাদের কর্মশক্তির একটি বড় অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। এঁদের বেশির ভাগই দিন আনে দিন খায়। সে জন্য তাঁদের নগদ সহায়তা দেওয়া খুব প্রয়োজন। বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা নির্ভর করছে রোগের সংক্রমণ কোনো পর্যায়ে থাকে, তার ওপর। তবে এ সময়ে বৈশ্বিক ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা যায়।
করোনার কারণে সরবরাহব্যবস্থার দুর্বলতা দৃশ্যমান হয়েছে। তাই এ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে। ইতিমধ্যে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া কাজ শুরু করে দিয়েছে। বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে নিয়ে তারা ইকোনমিক প্রসপারিটি নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করছে। বাংলাদেশও এই নেটওয়ার্কে ঢুকতে পারে। সে জন্য সুশাসনের সূচকে উন্নতি করতেই হবে।
এ ছাড়া উৎপাদনপ্রক্রিয়া আরও ডিজিটাইজড হবে বলে মনে হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশনের প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশে আর্থিক খাত বলতে ব্যাংকের কথাই সবার আগে আসে। পুঁজিবাজার, বন্ডবাজার, বিমা এসব থাকলেও, শক্তিশালী নয়। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্যের ওপর দেশের সার্বভৌম রেটিং অনেকটাই নির্ভর করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য ব্যাংকের তারল্য বাড়াতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানাই। তবে তা যথেষ্ট নয়। এ মুহূর্তে ব্যাংককে ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিতে হবে। সে জন্য সরকার যদি আংশিক নিশ্চয়তা বা পার্মিয়াল গ্যারান্টি স্কিম দেয়, তাহলে ব্যাংকগুলো ঝুঁকি নিতে পারে। পাশাপাশি এই ঝুঁকি নেওয়ার পর পর্যাপ্ত মুনাফা না এলে ব্যাংকগুলো ঝুঁকি নিতে চাইবে না।
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা ডিজিটাল স্ট্যাট্রেজির দিকে ঝুঁকব। তথ্য বিশ্লেষণে জোর দেব। সৃজনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করব। নগদবিহীন লেনদেন ব্যবস্থা গড়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে চেষ্টা করব। ইতিমধ্যে কিছু আলোচনা হয়েছে। নগদবিহীন ব্যবস্থা প্রণয়ন করা গেলে খরচ যেমন কমবে, ঝুঁকিও কমবে। পাশাপাশি কর্মীদের প্রশিক্ষণে জোর দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁরা নতুন ভূমিকায় খাপ খাইয়ে নিতে পারেন। অন্তত এ বছর আমরা খরচ কমানোর জন্য কর্মী ছাঁটাই করব না। তবে কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে হবে। সে জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।