নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে হলে সরকারকে অবশ্যই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে মিয়ানমারের ফাঁদে পা দিয়েছে সরকার। মিয়ানমার সরকার তাদের পররাষ্ট্র নীতিতে সবসময় অটল থেকেছে, কিন্তু বাংলাদেশ অটল থাকতে ব্যর্থ হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন বাংলাদেশের জন্য সত্যিকার অর্থে বিপদজনক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে হলে এককভাবে বাংলাদেশের পক্ষে ওটা করা সম্ভব হবে না। একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাসস্থান, ভূমির মালিকানা ফিরিয়ে দেয়া, নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার বিএনপি আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। বিকালে রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে এ গোলটেবিল বৈঠক হয়। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড.আবদুল মইন খান, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ,সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সচিব এএইচএম মোফাজ্জল করীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী ও অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া বক্তব্য দেন। বিএনপির নেতৃবৃন্দ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, ফ্রান্স, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, আফগানিস্তান, তুরস্ক, জাতিসংঘ, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি দেশের কুটনীতিকরা গোলা টেবিলে অংশ নেন। তবে বিদেশি কূটনীতিকরা আলোচনায় কোনো বক্তব্য দেনি, তারা আলোচকদের বক্তব্য নোট করেন।
এই গোল টেবিল বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সরকারকে পুনরায় জাতীয় ঐক্য আহ্বান জানিয়ে ১০ দফা সুপারিশ পেশ করে বিএনপি। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, নিজের মাতৃভূমিতে অবাধ চলাচলের নিশ্চিতকরণ, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহকে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, প্রত্যাবাসনের আগে ও পরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নের মিয়ানমারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সুযোগ রাখা, রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি না হতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া প্রভৃতি।
ফখরুল বলেন, এই সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান নেই, তারা অনির্বাচিত সরকার। সুতরাং তাদেরকে বিশ্বজনমত তৈরি করতে হলে সমগ্র জনগণকে সামনে নিয়েই এই অভাবটা পূরণ করতে হবে। এই সেমিনারের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারের কাছে পৌঁছাতে চাই, জনগণের কাছে পৌঁছাতে চাই, বিশ্বমানবতার কাছে পৌঁছাতে চাই। একইসঙ্গে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে, জাতিসংঘকে, আন্তর্জাতিক বিশ্বকে আহ্বান জানাচ্ছি, মানবিক যে অবস্থা তৈরি হয়েছে সেটাকে সমাধানের জন্য তারা তাদের ভূমিকা পালন করবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবার পুরনো খেলা শুরু করেছেন, বিএনপিকে দায়ী করতে শুরু করেছেন এবং তিনি আমাকে দায়ী করেছেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যু দিয়ে না-কি আমরা উস্কে দিচ্ছি রোহিঙ্গাদের। এটা সুইসাইডেল, এটা আত্মহননের কথা। আমরা মনে করি যে, এই ধরনের কথা-বার্তা শুধুমাত্র রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, মিয়ানমারকে আরো শক্তিশালী করবে এবং সমস্যা আরো বৃদ্ধি করবে। এই সরকারের ব্যর্থতা, তাদের অনভিজ্ঞতা, নতজানু পররাষ্ট্র নীতি তারা যে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, মিয়ানমারের ট্র্যাপের মধ্যে এই সরকার পড়ে গেছে। এখান থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে।