নয়াবার্তা প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নতুন মুদ্রানীতি ও ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে।মূলত সব পর্যায়ের মানুষের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে চালু হবে ডিজিটাল ব্যাংক। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা। আর নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দেো হয়েছে।
১৪ জুন বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের রূপরেখা ও নীতিমালা অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পর্ষদ সদস্য, ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। সভা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র আবুল বশর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র বলেন, ‘আজকে বোর্ড সভায় প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংক অনুমোদন হয়েছে। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। এই ব্যাংকের প্রত্যেক স্পন্সরের সর্বনিম্ন শেয়ারহোল্ডিং হবে ৫০ লাখ টাকা।
নীতিমালায় ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালানায় কোনো শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ও উইন্ডো ব্যাংকিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে ঋণ খেলাপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের এ ব্যাংকের উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, উদ্যোক্তাদের শেয়ার পাঁচ বছরের আগে হস্তান্তর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক তিন বছরের আগে এ অনুমোদন দিতে পারবে না।
নতুন ধরনের এ ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
বর্তমানে দেশে ৬১টি ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা দিচ্ছে আরও কয়েকটি কোম্পানি, যেগুলো মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে পরিচিত।
বর্তমানে নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর তিন বছরের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে নতুন ব্যাংকের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পাঁচ বছর সময় দেওয়া হচ্ছে। তারপরও সীমান্ত ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে পুঁজিবাজারে আসতে পারেনি। এখন প্রতিষ্ঠানটি চতুর্থ দফায় সময় চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সময় বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া বোর্ড সভায় রিজার্ভ চুরির মামলা পরিচালনাকারী আইনি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধ অনুমোদন দেওয়া হয়।
নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংক অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন ন্যূনতম ৪০০ কোটি ছিল। এখন ১০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে এটা ৫০০ কোটি টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বোর্ড সভায় নতুন মুদ্রানীতির অনুমোদন হয়েছে জানিয়ে মুখপাত্র জানান, আগামী ১৮ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে গভর্নর মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন। মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি জোর দেওয়া হবে।
জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
এর আগে গত ১ জুন প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টাকে প্রসারিত ও ত্বরান্বিত করতে একটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেছিলেন, এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। এ নীতিমালা ও ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ীই পরিচালিত হবে ডিজিটাল ব্যাংক।
ডিজিটাল ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ ও বিভিন্ন ফি বা চার্জ গ্রহণ সবই হবে অ্যাপভিত্তিক। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থাকবে কিন্তু কোনো শাখা থাকবে না। প্রাথমিকভাবে ডিজিটাল ব্যাংক শুধু সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ করবে।