
নয়াবার্তা প্রতিবেদক : আগামী জুনের মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনার লক্ষ্যে রেপোর সুদহার ৮ শতাংশ নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বাজারে অর্থের জোগান আরও কমানোর কথা বলা হয়েছে। ‘সতর্ক ও সঙ্কুলানমুখী’ নয়া মুদ্রানীতিতে রেপোর সুদ হার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দেওয়ার চলমান উদ্যোগের মধ্যে বাজারে অর্থের জোগান আরও কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে নীতি সুদহার আরও এক দফা বাড়িয়ে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য ‘সতর্ক ও সঙ্কুলানমুখী’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এ পরিবর্তনের ফলে এক দিন মেয়াদী রেপোর (পুনঃক্রয় চুক্তি) সুদ হার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ৮ শতাংশ হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাত দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার নয়া মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় স্বীকার করেন যে, গতবারের মুদ্রানীতিতে নেওয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একটু সময়ের প্রয়োজন হয়। বেশ সময় লেগে যায়। আগের চেয়ে না বাড়লেও গত নভেম্বর থেকে ক্রমাগত কমছে মূল্যস্ফীতি।’’ এবারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকারে রেখে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করার কথা বলেন গভর্নর।
গতকাল বুধবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতির একটি খসড়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন আকারে উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান।
ঘোষিত মুদ্রানীতিতে রিভার্স রেপো (বর্তমান নাম স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি-এসডিএফ) নিম্নসীমার সুদহার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। বাজারে উদ্বৃত্ত টাকা থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক রিভার্স রেপোর মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়।
এছাড়া নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্পেশাল রেপো বা এসএলএফের (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি) সুদহার ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় সংকটে পড়া ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে কিছুটা ব্যয় কমবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা রিভার্স রোপো সুদহার (স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি-এসডিএফ) বিদ্যমান ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাড়ে ছয় শতাংশ করা হয়েছে। নীতি সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্ন সীমার মধ্যে ব্যবধান ২০০ শতাংশ পয়েন্ট থেকে কমিয়ে ১৫০ শতাংশ পয়েন্টে নামিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ নীতি সুদহার ৮ শতাংশের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১৫০ বেসিস পয়েন্ট যোগ করে এসএলএফ সুদহার ও নিচে ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বিয়োগ করে এসডিএফ সুদহার নির্ধারণ করা হবে। তারল্যর প্রয়োজনে বাণিজ্যিক ব্যাংক যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদ হারে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন, বিনিময় হারের চাপ নিয়ন্ত্রণ, সরকারের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়াজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মুদ্রানীতিতে। তবে ৪ শতাংশের ব্যাংক রেটে পরিবর্তন আনা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভনর কাজী ছাইদুর রহমান, একেএম সাজেদুর রহমান খান, আবু ফরাহ মো. নাছের ও নুরুন নাহার, নির্বাহী পরিচালক খোরশেদ আলম সংবাদ সম্মেলনে উপস্তিত ছিলেন।