নয়াবার্তা প্রতিবেদক : শরিয়াহর সীমারেখার মধ্যে থেকে , নারী সাহাবিরা অনেকেই পড়াশোনা, ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। অতএব শরিয়াহর সীমারেখার মধ্যে থেকে মেয়েরা পড়াশোনা, ক্যারিয়ারের উন্নতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবেন। ইসলামি বক্তা ও আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমাদুল্লাহ একথা বলেছেন।
শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সরাসরি প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে একজনের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নারীর উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিতর্কের মুখে শায়খ আহমাদুল্লাহ এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, মেয়েরা শরিয়াহর সীমারেখার মধ্যে থেকে পড়াশোনা, ক্যারিয়ারে উন্নতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবেন, নারী সাহাবিরা অনেকে করেছেন।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে জনপ্রিয় এই ইসলামি বক্তা বলেন, নারীদের যেন পুরুষের কাছে গিয়ে বিব্রতবোধ করতে না হয়, এজন্য কোনো নারী যদি শরিয়াহর সীমানার মধ্যে থেকে পড়াশোনা করেন, নিজেকে প্রস্তুত করেন এবং তিনি নারীদের সেবা দিতে চান তাহলে তা শুধু জায়েজ নয়, কোনো কোনো সময় সওয়াবেরও কাজ বলে বিবেচিত হবে নিয়তের ভিত্তিতে।
সওয়াবের বিষয়টিও ব্যাখ্যা করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেন, যেমন ধরা যাক- কোনো নারী যদি গাইনি ডাক্তার হতে চান মেয়েদের চিকিৎসার জন্য। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে গাইনি ডাক্তার না থাকলে এ জাতীয় ক্ষেত্রে পুরুষদের মাধ্যমে সেবা নিতে হবে…। তাই এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে মেয়েদের বাঁচাতে এবং যেন তাদের পর্দা, ব্যক্তিত্ব নষ্ট না হয়, অস্বস্তি বোধ করতে না হয়- এজন্য কোনো নারী নিজেকে প্রস্তুত করলে তা শুধু জায়েজ নয় সওয়াবের কারণ। অতএব মেয়েরা কোনো কাজ করতে পারবে না, বাহিরে যেতে পারবে না ব্যাপারটা এমন নয়।
তিনি আরও বলেন, তবে হ্যাঁ- ইসলামের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মনে রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘মেয়েরা তাদের বাসা বাড়িতে থেকে ভেতরের যে সাইটটা তার দেখাশোনা করবে। আর বাহিরে যখন যাওয়ার প্রয়োজন হয় তখন যাবে, কিন্তু তাদের মূল দায়িত্ব হলো অভ্যন্তরীণ দিকটা সামলানো, আর পুরুষের দায়িত্ব হলো বাহিরের সাইটটা সামলানো।’
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, আমরা একশ্রেণির মানুষকে দেখি তারা মেয়েদেরকে মুক্ত করার নাম দিয়ে ঘরে বাইরে সব জায়গায় কাজের বোঝা চাপিয়ে দেন। এর কারণে মেয়েদের ভেতরের দায়িত্ব- যেমন: রান্নাবান্না করতেই হয়, মা হিসেবে সন্তান প্রসব, গর্ভধারণ করতেই হয়, দুগ্ধ পান করাতেই হয়, এই পুরো কাজগুলো তাদের জীবনের একটা অংশজুড়ে করতে হয়। আবার বাইরেও তাদের ওপর কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, একটু চিন্তুা করলে দেখব- যারা এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করেছে, তারা দাম্পত্য জীবন, পারিবারিক জীবনের স্বাদ থেকে বঞ্চিত। ইউরোপ, আমেরিকা, পশ্চিমা বিভিন্ন উন্নত দেশের পারিবারিক শান্তি হারিয়ে গেছে। এর অন্যতম কারণ, আল্লাহ তায়ালা জীবনের যেই স্বাভাবিক ধারা রেখেছেন তার লঙ্ঘন।
দেশের প্রখ্যাত এ ইসলামি স্কলার বলেন, মেয়েদের ঘরে আবদ্ধ করে রাখা যেমন ইসলামের কথা নয়, ঠিক তেমনি নারীদের গঠন আকৃতির ওপর ভিত্তি করে আল্লাহ তায়ালা তাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন এর বাইরে গিয়ে পুরুষের সব কাজ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কথাও বলে না ইসলাম।
শায়খ আহমাদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে মেয়েদের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এখানে মেয়েরা ছেলেদের থেকে আলাদা পরিবেশে পড়াশোনা করছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের সুনামও রয়েছে। তাই মেয়েরা যেন পর্দা ও শরীয়তের সীমায় থেকে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে পারেন, দেশ ও সমাজের কল্যাণে অবদান রাখতে পারেন- এমন ব্যবস্থা রাখা উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন।’