নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : বিয়ে হয়েছে মাত্র চার মাস। সংসার গুছিয়ে উঠতে উঠতেই এল করোনাকাল। প্রথমে করোনা শনাক্ত হলো স্ত্রীর শরীরে। এরপর শনাক্ত হয় চিকিৎসক স্বামীরও। দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর তাঁরা দুজনই এখন করোনামুক্ত। বললেন, করোনায় আক্রান্ত হলে ভয় নয়, সচেতন হতে হবে। সুস্থতার জন্য নিজের মনোবল এবং স্বজন, সহকর্মীদের সহানুভূতি ও অনুপ্রেরণা খুবই প্রয়োজন।
করোনাজয়ী এই চিকিৎসক দম্পতি হলেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা রাজু বিশ্বাস ও উপজেলার বাকাল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক অনামিকা বিশ্বাস। দুজনই ৩৯তম বিসিএস সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বখতিয়ার আল মামুন জানান, সর্দি-জ্বর ও কাশি দেখা দিলে অনামিকা বিশ্বাসের (২৭) করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত ১৩ এপ্রিল তাঁর করোনা পজিটিভ প্রতিবেদন আসে। অনামিকার সংস্পর্শে থেকে আক্রান্ত হন স্বামী রাজু বিশ্বাস। তাঁরা প্রথমে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সুস্থ হয়ে এই দম্পতি বর্তমানে গৌরনদীর ভাড়া বাসায় ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে আছেন।
করোনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রাজু বিশ্বাস বলেন, স্ত্রীর করোনা শনাক্তের পর বাসায় থেকেই চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। ১৪ এপ্রিল সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখান থেকে যান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ১৬ এপ্রিল তাঁরও করোনা শনাক্ত হয়।
রাজু বিশ্বাস বলেন, ‘দুজনের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর অনেকটা ভেঙে পড়লাম। ওই সময় দেশে প্রথম চিকিৎসক মৃত্যুর ঘটনায় আমাদের মধ্যে আতঙ্কটা বেশি ছিল। বরিশালে ঝুঁকি না নিয়ে দুজনই কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত চিকিৎসা নেওয়ার পরে একাধিক পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসায় চিকিৎসার পরামর্শপত্র দিয়ে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।’
অনামিকা বিশ্বাস বলেন, সুস্থ হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মনোবল এবং সাহস, কাছের মানুষের ভালোবাসা, প্রেরণা। ওষুধের চেয়ে এসব বেশি কাজ করে। তাঁরা সহকর্মী ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের থেকে এসব পেয়েছেন। তিনি জানান, আদা, দারুচিনি, লবঙ্গ দিয়ে হালকা গরম পানি করে দিনে তিন-চারবার খেয়েছেন। গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে তিন-চারবার গড়গড়া করেছেন। পানি ফুটিয়ে ভাব নিয়েছেন (ম্যানথল ছাড়া)। সুস্থ হওয়ার জন্য এগুলো খুবই কার্যকর চিকিৎসা। এ ছাড়া চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করেছেন।
অনামিকা বলেন, ‘নতুন জীবন পেয়েছি, নতুন স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে আসায় সেবা প্রদানের দায়িত্ববোধ যেন আরও অনেকটা বেড়ে গেল। যত দিন বেঁচে থাকব, মানুষকে সেবা দানের নতুন স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকব।’
করোনাকালের তিক্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রাজু বলেন, মুহূর্তের মধ্যে চিরচেনা পৃথিবীটা অচেনায় পরিণত হয়। কাছের মানুষগুলোর অচেনা রূপ দেখা যায়। যে রাতে অনামিকার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল, সেই রাতে বাসায় থাকা এবং সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসক দম্পতি সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরা নিয়ে বাড়িওয়ালা ও এলাকাবাসীর আচরণ ছিল অমানবিক। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও সহায়তা নিয়ে চিকিৎসক দম্পতিকে বাসায় ফিরতে হয়েছে।