নির্বাচনের সময় সরকার যেভাবে আছে সেভাবেই চলমান থাকবে : প্রধানমন্ত্রী

নয়াবার্ত‍া প্রতিবেদক : নির্বাচনের সময় সরকার যেভাবে আছে সেভাবেই চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, এ কারণে নির্বাচনের সময়ে সরকারের আকার ছোট করা হবে না।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের ‘আকার ছোট করলে দেখা যায়—অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ হয় না। কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হয়ে যায়। ওই জন্যই বলেছি, আমাদের সরকার যেভাবে আছে ওভাবেই চলমান থাকবে। সরকার রুটিন কাজ করবে।’ আকার-বিকার যেটা হবে, তখন দেখা যাবে বলেও মন্তব্য করেন সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার কে হবে, সেদিকে আমরা যাচ্ছি না। আমরা যেভাবে চলার… অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলাপ করেছি, সংসদীয় গণতন্ত্র যেভাবে আছে সেভাবে চলবে। আমরা যারা থাকবো, নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে আমরা রুটিনওয়ার্ক পালন করবো। দৈনন্দিন কাজ করবো যাতে সরকার অচল হয়ে না যায়। যে প্রার্থী হবে সে তো আর সরকারি কোনও সুযোগ পাবে না।’

নির্বাচনের সময় ভারত, কানাডা বা ইংল্যান্ডসহ সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে হয়, বাংলাদেশেও সেটা হবে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, যখনই তফসিল হবে এবং নমিনেশন সাবমিট হবে, তখন থেকে আর মন্ত্রীরা সুযোগ-সুবিধা বা পতাকা কোনও সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে না। একজন প্রার্থী হিসেবে তাকে ভোট চাইতে হবে। ২০১৮ সালে সেভাবে হয়েছিল। হ্যাঁ, ২০১৪ সালে আমি অন্য দল থেকে কিছু মন্ত্রী নিয়েছিলাম। ২০১৮ সালে সেই পদ্ধতি করিনি। যেটা অন্য দেশে হয় এবারও সেই পদ্ধতি হবে। রাষ্ট্রপতি অসুস্থ, তিনি বাইরে আছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। তফসিলের পর যে সময়টা দেওয়া হয়, মনোনয়নপত্র জমার সময় দেওয়া হয়। বাছাই হয়। প্রত্যাহার হয়। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচন প্রচারণা শুরু হয়। নির্বাচন প্রচারণার সময় কোনও মন্ত্রী কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবে না। এটাই নিয়ম। কিন্তু সরকার থেমে থাকবে না। সরকারি দৈনন্দিন যে কাজ রুটিন ওয়ার্ক যেটা বলে, সেগুলো চলবে। নইলে তো স্থবির হয়ে যাবে, দেশ তো চলবে না।’

নিজে প্রার্থী হওয়ায় গণভবনে বসে আর ভিডিও কনফারেন্স করবেন না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আলাদা একটা অফিস নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।

হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হবে

বিএনপির কার্যালয়ে কথিত মার্কিন নাগরিককে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে জড়িত সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হবে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি তো সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে আসছে। তার থেকে ওই নামটা আসছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। তাকে ছাড়া হচ্ছে না। তাকে ছাড়া হবেও না। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি। তাকেও গ্রেফতার করা হবে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাকে খোঁজ করা হচ্ছে। তাকে ঠিকই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, এরকম ফ্রড সে করলো কেন? সে যেই হোক আইনের কাছে সবাই সমান।’

কার সঙ্গে সংলাপ?

সংকট সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস “বাংলাদেশে উদ্বেগ প্রশমন এবং একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজতে সব পক্ষের শর্তহীন সংলাপের আহ্বান করেছেন,” সংলাপ নিয়ে সরকার কী ভাবছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলটা কে? সংসদীয় রীতিতে সংসদের বিরোধী দল হলো প্রকৃত বিরোধী দল। এর বাইরের গুলো দল হিসেবে গণ্য হয় না। আমেরিকায়ও হয় না। ট্রাম্পের দলকে তারা বিরোধী দল হিসেবে দেখে। যদিও আমরা তাদের সিস্টেমে না। তিনি বলেন, কার সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে? ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে কি বাইডেন ডায়ালগ করতেছে? যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমি করব।’

তিনি বলেন, ‘এই যে মানুষগুলোকে হত্যা করা হলো, তাকে (পিটার হাস) প্রশ্ন—যখন উপনির্বাচনে ঘটনা ঘটেছিল, হিরো আলমকে কেউ মেরেছিল, তারা সে ঘটনায় বিচার দাবি করেছিল। এখন যখন পুলিশকে হত্যা করলো, এতগুলো সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, তখন তার বিচার দাবি করেনি কেন? যেভাবে পুলিশকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিল, ওই খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ? কীসের আলোচনা? যারা উন্নয়ন ধ্বংস করতে পারে তাদের সঙ্গে ডায়ালগ? সে (পিটার হাস) বসে ডিনার খাক, সে বসে ডায়ালগ করুক। এটা আমাদের দেশ, স্বাধীনতা এনেছি রক্ত দিয়ে। এ কথাটা মনে থাকা উচিত। ওই খুনিদের সঙ্গে ডায়ালগ বাংলাদেশের মানুষও চাচ্ছে না। বরং বাংলাদেশের মানুষ তাদের ঘৃণা করে। বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য। যেটুকু অর্জন করেছিল তারা, সেটা আমরা সুযোগ করে দিয়েছিলাম, সেটা তারা হারিয়েছে।’

সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে অনেক আন্তর্জাতিক সংগঠন রয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে আপনারা কোনও সহানুভূতি পেয়েছেন? কোনও বিবৃতি পেয়েছেন? কেন পাননি? তাদের জিজ্ঞাসা করেন—এখন তারা চুপ কেন? তারপর মানবাধিকার সংস্থা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তারা চুপ কেন? তাদের মানবিকবোধগুলো গেলো কোথায়? তাদের কথা, বিবৃতি শুনি না কীসের জন্য, কী কারণে, রহস্যটা কী?’

আমাদের দেশের যে সংগঠনগুলো, যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে, বুদ্ধির ভাণ্ডার খুলে ফেলে, আজকে সে ভাণ্ডার বন্ধ কেন? তারা চুপ কেন? তারা কি বুদ্ধিহীন হয়ে গেছে? সব বুদ্ধি কি চলে গেছে?’

সে ভাড়া খাটতে আসছিল

বিএনপির কার্যালয়ে কথিত মার্কিন নাগরিকের সংবাদ সম্মেলন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের দরজা খোলা থাকে, যে কেউ আসতে পারে। যে কেউ কথা বলতে পারে। কিন্তু যে এসে বসলো! যেভাবে খাতির তর্জমা করে বসানো হলো। আর যেভাবে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হলো। এবং যত মিথ্যা তথ্য দিয়ে গেলো। বোধহয় নিজেদের কিছু ইমেজ বাড়ানোর জন্য এ ধরনের ভাড়াটে লোক নিয়ে আসছে। তাকে যখন ধরা হলো এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো, তখন আসল কথা বেরিয়ে এলো। সে ভাড়া খাটতে আসছিল। তিনি মার্কিন নাগরিক, এটা মার্কিনদের দেখতে হবে। আর কথায় কথায় আমাদের স্যাংশন দেয়। আমার জনগণ আছে আর আমার দেশ আছে। আমি এটা নিয়ে আছি।’

শঠের সঙ্গে শঠের মতো আচরণ করতে হবে, এমনটা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তারা এখানে সেখানে চোরাপথে গিয়ে একেকটা গাড়ি পোড়াচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করা ও গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তি দেওয়া… আর যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, আমার তো মনে হয়—যার গাড়ি যখন পোড়াবে আর যে ধরা পড়বে, তার হাতও ওই আগুন দিয়ে পোড়ায়ে দেওয়া উচিত। তাহলে তাদের শিক্ষা হবে, না হলে শিক্ষা হবে না। তাদের শিক্ষাটা ওইভাবে করতে হবে। আচরণের জন্য সে রকম শিক্ষা দিতে হবে।’

বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আশা করবো এগুলো বন্ধ করবে। না করলে পরিণতি তাদের ভোগ করতে হবে। এবার এমনি এমনি যেতে দেবো না। নির্বাচন এভাবে তারা থামাতে পারবে না। ২০১৩ সালে পারেনি, ২০১৮ সালে পারেনি। এবারও পারবে না। নির্বাচন যথাসময়ে হবে। তারা তো চাচ্ছে এটাই (নির্বাচন বানচাল)। তারা তা পারবে না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণ ওদের সঙ্গে নেই। জনগণকে কষ্ট দিয়ে রাজনীতি হয় না। এটা তারা ভুলে যায়।’

Share