পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন হিতে বিপরীত হতে পারে

ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যে কোনো ওষুধ ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ প্রতিটি ওষুধেরই কোনো না কোনো সাইড এফেক্ট আছে। একেকজনের শরীরে একেক ধরনের সাইড এফেক্ট হয়। চিকিৎসকরা রোগীর কাছে প্রশ্ন করে বিস্তারিত জেনে ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। কিন্তু রোগী না জেনেবুঝে ওষুধ সেবন করলে সুস্থতার পরিবর্তে উল্টো বিপদ বাড়তে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

আমাদের দেশে কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা আগেও ছিল। করোনা সংক্রমণের পর তা আরও বেড়েছে। হালকা জ্বর, শরীর ব্যথা ও গলা ব্যথা হলেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন মানুষ। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শও নেওয়া হয় না। মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক মানুষের শরীরে কিছু অর্গানিজম থাকে। প্রয়োজন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেললে তখন সেই অর্গানিজম অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট সেই অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারায়। এভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী শরীরে প্রয়োজনের সময় ব্যবহূত অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করবে না। সম্প্রতি করোনা প্রতিরোধে ডেক্সামেথাসন নামে একটি ওষুধের নাম শোনা যাচ্ছে। অক্সফোর্ডের একদল গবেষক এই ওষুধের কার্যকারিতার কথা বলেছেন। এরপরই মানুষ এই ওষুধের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। এটি স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ। কিডনি ও ডায়াবেটিস জাতীয় সমস্যা থাকা ব্যক্তিরা এই ওষুধ সেবনে মারাত্মক বিপদে পড়তে পারেন। সুতরাং চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ সেবনের ফল ভালো হবে না। যখন যে ওষুধের নাম শোনা যাচ্ছে মানুষ সেই ওষুধের পেছনে ছুটছেন। নিজ উদ্যোগে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে বাসাবাড়িতে রাখছেন। এভাবে বিভিন্ন ধরনের ওষুধের নাম আসার কারণে কোনটা রেখে কোনটা সেবন করবেন তা নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়ছে। একসঙ্গে সবগুলো ওষুধ কেউ সেবন করলে তখন তা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। আবার মাসের পর মাস ঘরে মজুদ থাকা এবং সঠিক তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা না থাকার কারণে ওষুধের কার্যকারিতা হারাতে পারে। ওই ওষুধ সেবনে ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। বাড়তি ওষুধ মজুদের কারণে বাজারে চাহিদা বেড়ে দাম বাড়বে। এতে করে প্রয়োজন আছে এমন মানুষ নির্দিষ্ট ওষুধটি হয়তো নাও পেতে পারেন। সুতরাং এ বিষয়গুলো কাম্য নয়। সুতরাং সবার প্রতি পরামর্শ থাকবে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ ওষুধ সেবন করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

লেখক :মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও উপদেষ্টা, করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি

Share