প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষায় ৬ সংস্কার কমিশন

বিশেষ প্রতিবেদক : ছয় সংস্কার কমিশন শিগগিরই কাজ শুরু করবে। কমিশনগুলোর প্রধানদের নাম ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। সদস্যদের নামও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ–কালের মধ্যেই কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে সংস্কার কমিশনগুলো পুরোদমে কাজ শুরুর আগে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। খুব দ্রুতই এ আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, কমিশনের কাজ মঙ্গলবার থেকে শুরু করার কথা। কিন্তু সিদ্ধান্ত এসেছে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদ আরেক দফা আলোচনা করতে চাইছে।

তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ছয় সংস্কার কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আজ–কালের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার।

শফিকুল আলম বলেন, কমিটির প্রধানদের যখন নাম ঘোষণা হয়েছে, তখন কমিশনের কাজ কিছুটা হলেও শুরু হয়েছে। যেহেতু এখানে রাজনৈতিক দলগুলো একটি অংশীজন। তাই তাদের সঙ্গে আলাপ করে মতামত চাওয়া হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘এটুকু বলতে পারি, এই আলোচনাটি খুব তাড়াতাড়ি হবে। আলোচনা হওয়ার পরই দেখবেন কমিশনের কাজগুলো শুরু হয়েছে।’

তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ছয় সংস্কার কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আজ–কালের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার। কমিশনগুলোর সদস্যদের নামও প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের কোনো সুবিধাভোগীকে কমিশনের সদস্য হিসেবে রাখা হয়নি। কমিশনগুলো আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। এরপর পরামর্শমূলক মতবিনিময় করা হবে, যেখানে সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এভাবেই সংস্কারকাঠামো চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করেছে সরকার।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রমতে, অন্তর্বর্তী সরকার শিগগিরই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। সংস্কার কমিশনগুলোর কাজ, আসন্ন দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উদ্‌যাপনসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরিস্থিতি আলোচনায় আসতে পারে।

প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। এরপর পরামর্শমূলক মতবিনিময় করা হবে, যেখানে সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এভাবেই সংস্কারকাঠামো চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করেছে সরকার।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবদুল মূয়ীদ চৌধুরী। আর সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হলেও পরে তা পরিবর্তন করে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার থেকে কমিশনের কাজ শুরুর করার কথা ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কাজ শুরুর জন্য প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষায় আছেন।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংস্কার কমিশনের অফিসগুলো ঠিক করছে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়। যেমন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের অফিস নির্ধারণ করা হয়েছে জাতীয় সংসদের এমপি হোস্টেলের ১ নম্বর ব্লকে। অন্যদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মূয়ীদ চৌধুরীর বসার জন্য সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দোতলায় সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই দপ্তরের সামনে তাঁর নামফলকও টাঙানো হয়েছে।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের সময়সীমা-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বিশ্ব নেতারা নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে জানতে চাননি। সময়টা নির্ভর করবে কমিশনগুলোর প্রতিবেদন ও তা নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার ওপর। তারপর সময়ের বিষয়টা আসে যে নির্বাচন কবে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে রয়টার্সকে দেওয়া সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাক্ষাৎকারের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, রয়টার্সের রিপোর্টের ষষ্ঠ প্যারায় বলেছে, ফলোয়িং দ্য রিফর্মস, তারপর বলেছে ওই ১৮ মাস।… সেই জায়গায় এটা ১৬ মাস, না ১৮ মাস, না ১২ মাস নাকি ৬ মাস, সেটা সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ।

প্রেস সচিব বলেন, এটা কবে হবে? এটি ১৬ মাস পরে হবে, নাকি ১২ মাস পরে নাকি ৮ মাস পরে, সেটা এখনই নির্ধারিত করা যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন, সেনাপ্রধান এখানে ওপিনিয়ন (মতামত) দিয়েছিলেন।

Share