নয়াবার্তা প্রতিবেদক : পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর প্রথম দিনে ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন চলাচল করেছে। এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় করা হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার ৩০০ টাকা। গতকাল রোববার সকাল ছয়টা থেকে আজ সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত এই হিসাব। এই হিসাব বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বাসেক)।
গত শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি টোল দিয়ে সেতু পার হন। তবে সাধারণ যানবাহনের জন্য গতকাল সকাল ছয়টা থেকে সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণের আগে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, এ সেতু দিয়ে দিনে প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। সে তুলনায় প্রথম দিন পূর্বাভাসের দ্বিগুণের বেশি যান চলেছে। তবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বাসেক) সূত্র বলছে, প্রথম দিনের যানবাহনের বড় অংশই মোটরসাইকেল। অবশ্য আজ সকাল ছয়টা থেকে সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
বাসেকের তথ্য অনুসারে, প্রথম দিন মাওয়া দিয়ে যানবাহন পার হয়েছে ২৬ হাজার ৫৮৯টি। এপথে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৯০০ টাকা। জাজিরা দিয়ে যানবাহন পার হয়েছে ২৪ হাজার ৭২৭টি। আয় হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ৪ হাজার ৪০০ টাকা।
যানবাহন চলাচলের পূর্বাভাস : ২০০৫ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে যানবাহন চলাচল ও সেতু থেকে আয়ের একটা পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। পরে ২০১০ সালে নকশা প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ৩৫ বছরের যানবাহনের সংখ্যা এবং আয়ের একটা ছক তৈরি করে। এর ওপর ভিত্তি করে ২০১৯ সালের আগস্টে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঋণ চুক্তি করে সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে আয়, ব্যয় ও মুনাফার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছর প্রতিদিন পদ্মা সেতু দিয়ে ২৩ হাজার ৯৫৪টি যানবাহন চলাচল করবে। ২০২৯ সালে তা হবে দৈনিক ৩৪ হাজার ৭২৫টি। ২০৫০ সালে এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে ৬৬ হাজার ৮২৯টি। বর্তমানে ফেরিতে যে পরিমাণ যানবাহন পারাপার হয়, তার হিসাব করে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতে উন্নয়ন পরিকল্পনা বিবেচনায় নিয়ে যানবাহন বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করেছিলেন পরামর্শকেরা।
প্রথম দিন মাওয়া দিয়ে যানবাহন পার হয়েছে ২৬ হাজার ৫৮৯টি। এপথে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৯০০ টাকা। জাজিরা দিয়ে যানবাহন পার হয়েছে ২৪ হাজার ৭২৭টি। আয় হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ৪ হাজার ৪০০ টাকা।
পূর্বাভাস অনুসারে, যানবাহন চলাচল করলে পদ্মা সেতু থেকে প্রথম বছর আয় হবে ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এ হিসাবে ৩৫ বছরে এই সেতু থেকে আয় হবে ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে সব টাকা সেতুর নির্মাণ ও পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ঘরে যাবে না। প্রথমেই আয় থেকে সরকারকে ভ্যাট দিতে হবে। টোল আদায়কারীর পেছনে খরচ আছে। এরপর যা থাকবে, তা থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরিশোধ করতে হবে ঋণের কিস্তি। এসব ব্যয়ের পর টাকা থাকলে তা সেতু কর্তৃপক্ষের মুনাফা হিসেবে বিবেচিত হবে।
পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হলেও এই টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ১ শতাংশ সুদে ৩৫ বছরে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য তিন মাস পরপর কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। সব মিলিয়ে ১৪০ কিস্তিতে ঋণের টাকা (সুদ ও আসলে) পরিশোধ করা হবে।
যেভাবে খরচ হবে টোলের টাকা : এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা আছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান সরকারের ঋণ মওকুফ ফান্ডের অর্থ ৩০০ কোটি টাকা। এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। ফলে সেতু বিভাগকে আসল হিসেবে ২৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এর সঙ্গে বাড়তি ১ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হবে। অর্থাৎ সুদ-আসলে পরিশোধ করতে হবে ৩৬ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিতে টোলের টাকা ব্যয়ের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সেতুর সাধারণ রক্ষণাবেক্ষণে টোল থেকে আয়ের সাড়ে ৭ শতাংশ ব্যয় হবে। এর মধ্যে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের খরচও আছে। প্রতি ১০ বছর পরপর বড় ধরনের মেরামত করতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চালুর দশম বছরে ৫০০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। ২০তম বছরে ব্যয় করতে হবে এক হাজার কোটি টাকা। ৩০তম ও ৪০তম বছরে ব্যয় হবে দেড় হাজার কোটি টাকা করে। আদায় করা টোলের ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কাটা যাবে। অবচয় হবে মোট নির্মাণব্যয়ের ২ শতাংশ হারে। সব ব্যয় শেষে যে টাকা থাকবে, তা থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। আর কিস্তি পরিশোধের পর যে টাকা (মুনাফা) থাকবে, তার ওপর ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দেবে সেতু বিভাগ।
প্রতি ১৫ বছর পরপর টোল হার ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। সে হিসাবে ২০৫৩ সাল নাগাদ একটি প্রাইভেট কারের টোল দুই হাজার টাকার বেশি হবে।