নয়াবার্তা প্রতিবেদক : টি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার বিবাহ নিবন্ধন কার্যক্রম শৃঙ্খলায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরই অংশ হিসেবে বিয়ের ক্ষেত্রে কত টাকা কর দিতে হবে তা জানিয়েছে সংস্থাটি।
সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রথম বিয়ের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা কর হলেও দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বিয়ের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৫ হাজার, ২০ হাজার এবং ৫০ হাজার টাকা কর নির্ধারণ করা হয়েছে।
ফলে বিয়ে নিবন্ধন সংক্রান্ত বিষয়াবলি যেমন শৃঙ্খলিত ও তথ্য সমৃদ্ধ হবে তেমনই ভবিষ্যতে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহারে বিশেষত বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে অন্য সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট তথ্য সরবরাহ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সহায়ক হবে। একই সঙ্গে বাড়বে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আদায়।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৮২ নম্বর ধারার চতুর্থ তফসিলের ৮ নম্বর ক্রমিকে অর্পিত ক্ষমতাবলে এবং আদর্শ কর তফসিল ২০১৬ এর ১০(৪) এর ১৫২ নম্বর ক্রমিকে উল্লিখিত হারে এ কর আদায় করা হবে।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ সবার কাছে অপ্রত্যাশিত একটি বিষয়। কিন্তু তারপরও বাস্তবতার নিরিখে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে। বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত তথ্যাদি করপোরেশনে এলেও বিবাহ নিবন্ধন সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমাদের কাছে থাকে না। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী এটি বাধ্যতামূলক।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও বিবাহ সংক্রান্ত তথ্য থাকলে বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে অনেক সময় তা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি অনেক সময় বিজ্ঞ আদালত ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়। ফলে আমাদের এই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সামষ্টিকভাবে বিবাহ নিবন্ধন কার্যক্রম একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আসবে।
শৃঙ্খলা আনয়নে এ কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, অনেক সময় কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশান বা উত্তরাধিকার নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়। তাছাড়া বিদেশগামী যাত্রীদের ও বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে অনেক সময় বিবাহ নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্যের সঠিকতা যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। এরকম বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহ নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্যাদির গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি বলেন, এছাড়াও অনেক সময় বিদেশি দূতাবাসসমূহের বিবাহ সংক্রান্ত তথ্যাদির প্রয়োজন হয়। তাই বিবাহ নিবন্ধন কার্যক্রম লিপিবদ্ধ থাকলে তারাও সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে এসব তথ্য পেতে পারে। শৃঙ্খলা ফেরাতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ লক্ষ্যে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত চাইলে মন্ত্রণালয় গত বছরের ১৩ মার্চ আদর্শ কর তফসিল, ২০১৬ এর ১০(৪) এর ১৫২ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত কর আদায়ে একটি পত্র পাঠায়।
পরে গত বছরের ৬ জুন করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা হয়। করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সভাপতিত্বে ওই সভায় করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ঢাকা বিভাগীয় রেজিস্ট্রার, ঢাকা জেলার রেজিস্ট্রার ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার, করপোরেশনের অধিক্ষেত্র এলাকার কাজীরা ও করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করপোরেশনের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড গত জানুয়ারি মাসে ২৮টি বিবাহ নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য ২ হাজার ৮০০ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে।
বর্তমানে এ কার্যক্রম ম্যানুয়ালি পরিচালনা করা হলেও শিগগির তা অনলাইনে নিতে এরই মধ্যে করপোরেশন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। এ কাজ বাস্তবায়ন হলে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও বিবাহ নিবন্ধন কর পরিশোধ করা যাবে।
ডিএসসিসি জানায়, আদর্শ কর তফসিল, ২০১৬ এর ১০(৪) এর ১৫২ নম্বর ক্রমিক অনুযায়ী (ক) প্রথম বিবাহ বা স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রথম বিবাহের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা, (খ) প্রথম স্ত্রীর জীবদ্দশায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে দ্বিতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা, (গ) প্রথম দুই স্ত্রীর জীবদ্দশায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে তৃতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা, (ঘ) প্রথম তিন স্ত্রীর জীবদ্দশায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে চতুর্থ বিবাহের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা কর করপোরেশনের রাজস্বে জমা দিতে হবে।
এছাড়া কোনো ব্যক্তির প্রথম স্ত্রী যদি মানসিক ভারসাম্যহীন অথবা বন্ধ্যা হয় তাহলে পরবর্তী বিয়ের ক্ষেত্রে ২০০ টাকা কর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ক, খ, গ ও ঘ -এ বর্ণিত কর প্রযোজ্য হবে না।