প্রবাসী আয়ে শুভ সূচনা, ১২ দিনে এলো ১০ হাজার কোটি টাকা

গাজী আবু বকর : নতুন বছরে নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করতে না করতেই প্রবাসী আয়ে শুভ সূচনা হয়েছে। বছরের প্রথম মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসীরা বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে ৯১ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে ১০ হাজার ৭৫ কোটি টাকা।

গতকাল ১৪ জানুয়ারি রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি জানুয়ারি মাসের ১২ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮২ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। দেশে ব্যবসারত বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্য বিদায়ী ডিসেম্বরে আসে ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২১ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। আলোচ্য মাসে দিনে গড়ে এসেছে ৬ কোটি ৪১ লাখ ডলার বা ৭০৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছিলো ১৯ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (বিকেবি) মাধ্যমে এসেছিলো ৬ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছিলো ১৭২ কোটি ৪৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছিলো ৫২ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয় আসে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। পরের মাস আগস্টে এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ লাখ ডলার। অক্টোবরে আসে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার। নভেম্বরে ১৯৩ কোটি ডলার এবং সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে আসে ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ৩০ কোটি ৫২ লাখ ডলার বেশি এসেছে। তবে গত অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় মাসে অর্থাৎ জুলাই এবং আগস্টে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। অন্য মাসগুলোতে দেড় বিলিয়ন বা তার কাছাকাছি রেমিট্যান্স আসে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার ডলার। দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসেছিল ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। পরের মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ এবং ডিসেম্বরে এসেছিল ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১৯০ কোটি ডলার। ২০২২ খ্রিস্টাব্দে এসেছিল ২ হাজার ১৩০ কোটি ডলার। এর মানে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে দেশে প্রবাসী আয়ে প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে ২০২১ খ্রিস্টাব্দে ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার, ২০২০ খ্রিস্টাব্দে ২ হাজার ১৭৩ কোটি ডলার ও ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল।

সেই হিসাবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রবাসী আয়ে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা কাঙ্ক্ষিত নয়। কারণ, প্রতিবছর যে পরিমাণ জনশক্তি রপ্তানি হয়ে থাকে, সে অনুযায়ী প্রবাসী আয়ে তেমন প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর মাসে গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে। এ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৯ কোটি ডলার। এর আগে গত জুনে ২১৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল।

দুই বছর ধরে চলা সংকটের কারণে দেশে মার্কিন ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকায় উঠেছে। তবে ব্যাংকগুলো আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম ১২০ টাকার বেশি নিচ্ছে। কারণ, ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কিনছে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে। এরপরও বিদায়ী বছরে প্রবাসী আয়ে বড় প্রবৃদ্ধি হয়নি। যদিও গত বছর রেকর্ড পরিমাণ জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে।

Share