
নয়াবার্তা প্রতিবেদক : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশন চাইলে এক বা একাধিক আসন অথবা প্রয়োজন মনে করলে পুরো ফলাফল বাতিল করতে পারবে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা জানিয়েছেন।
এর আগে নির্বাচনের সময় কমিশনের (ইসি) কর্তৃত্ব বাড়ানো, না ভোট চালু, ইভিএম বিলুপ্তি, জোটবদ্ধ ভোটেও নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করাসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১৯৭২ একগুচ্ছ সংশোধনী প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়।
আরপিওতে সংশোধনী আনতে এদিন সকাল ১১টার দিকে কমিশন সভায় বসে, শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। এরপর সানাউল্লাহ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন অবস্থা বুঝে নির্বাচন স্থগিত করা, এক বা একাধিক বা সমস্ত কনস্টিটিয়েন্সির একইভাবে ফলাফল এক বা একাধিক বা সমস্ত কনস্টিটুয়েন্সির ফলাফল বাতিল করতে পারবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি কার্য যে বিধান সেটা সন্নিবেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ আরপিওতে এটার বিধান করা হয়েছে। যাতে করে আচরণ বিধিটা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যায় এবং এটা যেন আপনার একাধিক মাধ্যমে যেন প্রয়োগ করা যায়।
আরপিওতে নির্বাচন স্থগিত ও ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘এটি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ, কমিশন প্রয়োজন অনুযায়ী এক বা একাধিক অথবা সব নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে। গণমাধ্যমকর্মীরা ভোট গণনার পুরো সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন, তবে মাঝপথে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না।’
তিনি আরও জানান, নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলাজনিত শাস্তিগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্তের ফলাফল কমিশনকে জানাতে হবে।
না ভোটের বিধান প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচনে ‘না ভোটের’ বিধান ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যেখানে কোনো একজন প্রার্থী থাকলেও তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হবে না, তাকে অবশ্যই ভোটে অংশগ্রহণ করতে হবে। যদি দ্বিতীয় দফায়ও বিজয়ী না হন, তখন তিনি বিজয়ী বলে গণ্য হবে।’
এছাড়া, নির্বাচনী কেন্দ্রে কমিশনের অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক এবং সংবাদকর্মীদের প্রবেশের বিধান নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভোট গণনায় সমান হলে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আগের বিধান অনুযায়ী, যদি ভোটের সংখ্যায় দুই প্রার্থীর ভোট সমান থাকে, তবে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু এখন তা বাতিল করে পুর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
জোটবদ্ধ নির্বাচনের নিয়ম প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলেও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজেদের প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করবে। অর্থাৎ, দলীয় স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকবে। এই বিধান সংস্কার কমিশনেরও প্রস্তাব ছিল এবং কমিশন তা মেনে নিয়েছে।’
নির্বাচনী ব্যয় প্রসঙ্গে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘প্রার্থীদের ব্যয়ের অডিটের ব্যাপারটাকে আরপিওতে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ইসি যেগুলো ব্যতয় থাকতে পারে সেগুলোকেই অডিট করবে। আগে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তি পর্যায় থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৫০ লাখ পর্যন্ত অনুদান বা ডোনেশন নিতে পারত। এটাকে দুই ক্ষেত্রেই ৫০ লাখ করা হয়েছে। তবে শর্ত থাকবে যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ট্রাানজেকশন হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ট্যাক্স রিটার্নে এটা দেখাতে হবে।’
এআই প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের মিথ্যাচার বা অপবাদ ছড়ানোর ব্যাপারে প্রার্থী, দল, সংস্থা, মিডিয়াসহ সবার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রভিশন করা হয়েছে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আরপিওতে সংস্কার প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত হলে বা নিষিদ্ধ হলে নিবন্ধন স্থগিত করার যে বিষয়টা সেটা অস্পষ্ট ছিল। এটা স্পষ্ট করে আরপিওতে যোগ করা হয়েছে।’
‘আমরা আশা করছি এ সপ্তাহের মধ্যে আমরা এসব সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত করে ফেলব। আগামী সপ্তাহে যেন এটা পাঠিয়ে দিতে পারি আইন মন্ত্রণালয়ে। এই সিদ্ধান্তগুলো এখন চূড়ান্ত বলতে পারেন,’ বলেন তিনি।