বন্ডেডপণ্য খোলাবাজারে, কঠোর এনবিআর, ১৫দিনে জব্দ ১৬ কাভার্ড ভ্যান

আনোয়ারা পারভীন : রফতানির প্রতিশ্রুতিতে পণ্য উৎপাদনের শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রি কিংবা পাচার ঠেকাতে মাঠে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর। গত ১৫ দিনে অন্তত ১৬টি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়েছে যাতে এ ধরনের পণ্য রয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ডেড সুবিধা নিয়ে পণ্য বা কাঁচামাল এনে অবৈধভাবে খোলা বাজারে সরবরাহ করে রাষ্ট্রকে অন্তত ছয় কোটি টাকা শুল্ক বঞ্চিত করছিলো। এগুলোকে ছাড় না দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বোর্ড।

সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিনের এই অনিয়ম ও ব্যবসায়ীদের এই অবৈধ কাজ প্রতিহত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে নতুন কমিশনার নিয়োগ দেয় এনবিআর। বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার নির্দেশনায় নতুন কমিশনার হুমায়ূন কবীর এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলেই জানায় সূত্রটি।

কমিশনারের নেতৃত্বে ছয়টি প্রিভেনটিভ টিম মাঠে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দিন-রাত অভিযানে গত দুই সপ্তাহে ১৬টি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়েছে।

এসব কাভার্ড ভ্যানে ফেব্রিক্স, পিপিদানা (প্লাস্টিক তৈরির কাঁচামাল), এসিডিটিক এসিড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, পেডিং (ব্লেজার বা জ্যাকেট তৈরির কাঁচামাল)। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।

এসব পণ্যের বিপরীতে প্রযোজ্য শুল্ক করের পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা বলেও নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।

পণ্যগুলো নোমান গ্রুপ, নাইস ডেনিম, ফারদিন অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড, রেজা ফ্যাশন লিমিটেডের বলে জানা গেছে।

এনবিআর বলছে, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্য কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯, বন্ডেড ওয়্যার হাউজ বিধিমালা ২০০৮ এর আওতায় বিভাগীয় মামলা করা হবে। সেই সঙ্গে তাদের বন্ডিং কার্যক্রম ও আমদানি-রফতানির তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, অসাধু ব্যবসায়ীদের এমন তৎপরতা সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বন্ডেড পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশীয় শিল্প কারখানা।

আর বৃহৎ ক্ষতির বিষয় হলো, প্রত্যাশিত রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বাধা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র আরও জানায়, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে প্রায় চার শতাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন। আর মামলাগুলোতে প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।

এই সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘ দিন ধরে দেশীয় শিল্প কারখানার মালিকরা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

সূত্র জানাচ্ছে, ব্যবসায়ীদের দাবি আমলে নিয়েই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে জোর দিয়ে কাজ করছে।

এনবিআর’র পদক্ষেপে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন দেশীয় শিল্প কারখানার মালিকরা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পক্ষ থেকে সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন একটি পত্রের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলেও জানায় সূত্র।

এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে এনবিআর কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বন্ড সুবিধার পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি রোধে অভিযান পরিচালনা করছি। আমাদের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রির সময় জব্দ করা হয়েছে- তাদের বিরুদ্ধে কাস্টমস আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি তাদের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বন্ড সুবিধা দেওয়া হয় দেশীয় শিল্পকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু বন্ড সুবিধা নিয়ে সেই বন্ডেড পণ্য যদি খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়, তাহলে সেটা অন্যায়। আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে এবং চলবে। যত বড় প্রতিষ্ঠানই হোক, অন্যায় করলে ক্ষমা করা হবে না।

Share

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋণ স্বীকার বাঞ্ছনীয় ।