বর্তমান সরকারের সময়েই জুলাই গণহত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করা হবে: আসিফ নজরুল

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে জুলাই গণহত্যাকারীদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সম্পন্ন করা হবে।

আজ সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজীগঞ্জ এলাকায় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে উপদেষ্টারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিলুফার ইয়াসমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে শহীদ আদিলের মা আয়েশা বেগম বক্তব্য দেন।

উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ৩৬ দিনে নয়, ১৫ দিনেই স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। এই আন্দোলনে অসীম সাহস নিয়ে নারায়ণগঞ্জেই ৫৬ জন শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা ২১ জন শহীদ হয়েছেন। আমরা শ্রদ্ধাভরে তাঁদের স্মরণ করি।’

গণহত্যার বিচার পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলেছে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এখানে কোনো রকম গাফিলতি থাকবে না। বিচার যে গতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এগিয়ে চলেছে, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সরকারের শাসনামলেই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।’

বৈষম্যহীন ও শোষণহীন বাংলাদেশ গড়তে জুলাই আন্দোলনে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগের কারণে বিজয় এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ঐক্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকবে, সেখানে কোনো শাসক এসে শোষকে পরিণত হবে না। এই ঐক্য ধরে রাখতে পারলে আমরা অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।’

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের কারণে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। এই জুলাইকে আমাদের বারবার স্মরণ করতে হবে। এই আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের স্মরণে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম অগ্রযাত্রা জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের মধ্য দিয়ে শুরু হলো।’

উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদী, মুজিববাদী শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় সংগ্রাম চালিয়েছিল। যে সংগ্রামে বহু মানুষ গুম হয়ে যান, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন অনেকে। গণভবনকে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। আশা করছি ৫ আগস্ট উদ্বোধন করতে পারব। স্বৈরাচারের ঠিকানা সংরক্ষণ করে দেখাতে চাই তাঁরা কীভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার চালাত, নির্যাতন করত। সেটা বাংলাদেশের মানুষ এসে দেখবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে সব শহীদের কবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা এই কাজগুলো ৫ আগস্টের মধ্যে শেষ করতে চাই।’

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেছুর রহমান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফত উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে শহীদ আদিলের মা আয়েশা বেগম জুলাই আন্দোলনে গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানান। অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টারা জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গণে বৃক্ষ রোপণ করেন।

Share