বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যির বাড়িতে আগুন লুটপাট

ফরিদপুর প্রতিবেদক : যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ পেয়েছিলেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (বাচ্চু রাজাকার)। সেই মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মান্নান মাতুব্বর। সেই ক্ষোভে ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তার বাড়িসহ সাত বাড়িতে হামলা হয়েছে। ৪-৫ হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে এসে এই হামলা চালায় এবং সাত বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ লুটপাট করে।

খবর পেয়ে বোয়ালমারী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিভিয়েছেন। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির আদেশে দণ্ডিত মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে প্রধান সাক্ষী ছিলেন আব্দুল মান্নান মাতুব্বর। পূর্বের সেই সূত্র ধরে এই হামলা হয়। তারা মান্নান মাতুব্বরের বড় ছেলে হারেজ মাতুব্বর, মেঝ ছেলে মজনু মাতুব্বর, ছোট ছেলে মাসুদ মাতুব্বরের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। পরে সেখান থেকে ফিরে সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামের মান্নান মাতুব্বরের সমর্থক হাসেম মোল্যা, কালাম মোল্যা, জালাল মোল্যা ও হবি মোল্যার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া এলাকাবাসী ও পুলিশ জানিয়েছে, পার্শ্ববর্তী সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বড় খায়েরদিয়ার ময়েনদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসীর সাথে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে পরমেশ্বরদী এলাকার মানুষের সাথে। দুটি উপজেলার সীমান্তবর্তী বাজার ময়েনদিয়াতে দুই উপজেলার ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করে আসছেন অতীত থেকেই। অতীতেও দুটি উপজেলার লোকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মাতুব্বর এবং তার ভাই স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক মাতুব্বর ময়েনদিয়া বাজারসহ আশপাশের এলাকা একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন।

সূত্র আরও জানায়, এসব ঘটনা ছাড়াও কয়েক বছর আগে একটি হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বর। দীর্ঘদিনের এই সকল পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা চেয়ারম্যানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে বলে জানা গেছে।

বসতবাড়িতে হামলার আগে চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বর এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যরা পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। তাদের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করে মোবাইল ফোনের সংযোগ বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম রসুল বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি।’ তিনি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি। এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। সেনাবাহিনীর তিনটি টিম ও থানা থেকে পর্যাপ্ত ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। এখন পর্যন্ত সংঘর্ষকারী কাউকে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখন সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো হতাহতের খবর জানা যায়নি।

Share