মাগুরা প্রতিনিধি : ‘আমার বাবাকে তোমরা কনে নিয়ে যাও। আমার বাবাকে নিয়ো না। বাড়িতে রেখে দাও। বাবাকে ছাড়া কীভাবে থাকব আমরা!’ মাগুরায় প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত মো. জাহিদ জোয়ার্দারের (৫০) মরদেহ যখন জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন পেছন থেকে এমন আহাজারি করছিল তাঁর মেয়ে। তার নাম মনা। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। জাহিদ জোয়ার্দারের তিন মেয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। আরেক মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। আরেকজনের বিয়ে হয়েছে।
গত শনিবার পূর্ববিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন মাগুরা সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ জোয়ার্দার। তিনি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় শ্রীরামপুর গ্রামে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।
আজ সকালে নিহত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মরদেহ ঘিরে আহাজারি করছেন তাঁর স্বজনেরা। এ সময় তাঁর বোন ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের তিন মেয়ে। তাঁকে কোনো কারণ ছাড়াই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ভাই হারালাম। আর তিনটা মেয়ে এতিম হয়ে গেল। আমরা এই হত্যার বিচার চাই। হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’
স্বজনেরা জানিয়েছেন, শনিবার বিকেলে শ্রীরামপুর মাঠে ফসলের খেতে সার ছিটাচ্ছিলেন জাহিদ জোয়ার্দার। এ সময় ১০–১৫ জন তাঁকে ঘিরে ধরে লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। গুরুতর আহত জাহিদকে উদ্ধার করে স্থানীয় ব্যক্তিরা মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় পাঠানো হয়। তবে রাত ১০টার দিকে পথেই মারা যান তিনি।
জাহিদ জোয়ার্দারের ভাই মাগুরা জেলা গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই চক্র গত বছর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আমাদের সামাজিক দলের সাত–আটজনকে ধরে মেরে পঙ্গু করে দিয়েছে। কয়েক মাস আগে আমার চাচা ইউসুফ আলী জোয়ার্দার ও আখিনুর জোয়ার্দারকে মেরে পঙ্গু করে দেয়। সেসব ঘটনায় মামলা হলেও কোনো বিচার হয়নি। এ কারণে এবার আমার ভাইকে প্রাণ দিতে হলো।’
হামলার জন্য হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. তাহাজ্জত হোসেন ও তাঁর দলের লোকজনকে দায়ী করছেন নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মো. তাহাজ্জত হোসেন। গতকাল রোববার তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘মারামারি কেন হয়েছে, জানি না। নির্বাচনের আগে থেকেই এ দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে আমি একই সামাজিক দলে আছি, এটা সঠিক। আর এই দলাদলির কারণেই প্রতিপক্ষের লোকজন আমাকে জড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন।’
ঘটনার পর গতকাল রাতে শ্রীরামপুর গ্রামে অন্তত পাঁচটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙচুর চালানো বাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রীরামপুর গ্রামের চঞ্চল বিশ্বাস, মাখন বিশ্বাস, টিক্কা বিশ্বাসসহ কয়েকজনের বাড়ি। ঘটনার পর থেকেই এসব বাড়ি পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
আজ চঞ্চল বিশ্বাসের স্ত্রী দিপালী বেগম বলেন, ‘রোববার রাতে এক–দেড় শ লোক আসে আমাগের বাড়িঘর ভাঙে দেছে। আমরা মারামারির সাথে ছিলাম না। আমরা শুধু সামাজিক দল করি বলেই আমাগের বাড়ি ভাঙে দেছে।’
জানতে চাইলে মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান আজ দুপুরে বলেন, এখনো মামলা হয়নি। কাউকে আটকও করা যায়নি। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক। ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।