আনোয়ারা পারভীন : চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে বিদেশি ঋণের অর্থ ছাড় হয়েছে ২১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। একই সময়ে বাংলাদেশকে সুদসহ আসল পরিশোধ করতে হয়েছে ১৩৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৪ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। অথচ গত বছরের একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছিল ২৪৬ কোটি ২৪ লাখ ডলার। আর একই সময়ে পরিশোধ করতে হয়েছিল ৮৮ কোটি চার লাখ ডলার। চরতি অথৃবছরে পরিশোধ করা মোট ঋণের মধ্যে সুদই রয়েছে ৫৬ কোটি ২২ লাখ ডলার, দেশি মুদ্রায় তা ৬ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৩ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, দেশি মুদ্রায় ২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে শুধু সুদ পরিশোধের চাপই বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক ঋণ ও সুদ পরিশোধের জন্য যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া ছিল, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে সরকারের এখন চার হাজার ২০ কোটি টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ইআরডির প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদেশি ঋণের অর্থছাড় যেমন কমেছে, তেমিন বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ ও সুদের চাপ অনেকে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বৈদেশিক ঋণ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা, যা ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণের ওপর সুদ খাতে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে দুই হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমলেও ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে অনেক। গত নভেম্বর শেষে বিদেশি ঋণদাতা সংস্থাগুলো ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৫৮৫ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৪৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার। ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের প্রথম দিকে সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ব্যয় কম হয়। বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দের ১০ শতাংশের কম অর্থ ব্যয় করেছে। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দের কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। তবে অর্থবছরের শেষ দিকে অর্থ ব্যয় বাড়বে।
ইআরডির হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ৩৫৮ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হবে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ২৭৪ কোটি ডলার। গত মার্চ পর্যন্ত বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ ছাড় কম হয়েছে। এদিকে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৭৩ কোটি ডলার। ঋণ পরিশোধ বৃদ্ধির এই ধারা আগামী বছরগুলোতেও থাকবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, পর্যাপ্ত ঋণের অভাবে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। কারণ ডলার সংকটের মধ্যে চাপ বাড়াচ্ছে বিদেশি ঋণ ও সুদ পরিশোধ। বছরের ব্যবধানে শুধু সুদ পরিশোধের হার প্রায় আড়াই গুণ। অথচ আশানুরূপ ঋণ পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এর প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।