বরিশাল প্রতিবেদক : পদ্মা সেতুর এক্সপার্ট প্যানেলের সদস্য ও ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, গভীরতা ও তীব্র স্রোতের কারণে পদ্মা অত্যন্ত শক্তিশালী নদী। সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে পদ্মাকে সংকুচিত করা হয়নি। সেতুর নিচ দিয়ে সারাবছর নৌ চলাচল করতে পারবে। পরিবেশগত মান বিবেচানায় রেখে সেতুর যাবতীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ইলিশ সম্পদ এবং জলজ বৈচিত্রের কোন ক্ষতি করবেনা এই সেতু। পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞে ব্যবহৃত হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি।
রোববার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনানন্দ দাশ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘পদ্মা সেতু ও এর আর্থ-সামাজিক তাৎপর্য’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, পদ্মা সেতু ছিল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। এই সেতু নির্মাণের পেছনে জনসমর্থন ছিল। বিশ্ব ব্যাংক পিছিয়ে গেছে রাজনৈতিক কারণে। অন্য কোন ত্রুটি ছিলনা।
তিনি আরও বলেন, সেতুর মূল কাজ শুরু হলে বিশ্ব ব্যাংক পুনরায় অর্থ সহায়তা দিতে চেয়েছিল। কিন্ত প্রধানমন্ত্রী রাজি হননি। বিশ্ব ব্যাংককে ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে। কারও সাহায্যে ছাড়া আমরা নিজেরাও পারি, পদ্মা সেতু তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ আয়োজিত সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাস গুপ্ত, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভুইয়া এবং বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এস.এম আখতারুজ্জামান। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন। স্বাগত বক্তৃতা করেন সেমিনার উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সহকারী অধ্যাপক অসীম কুমার নন্দী।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয় পদ্মা নদী বাংলাদেশের দুই অঞ্চলকে বিভক্ত করে রেখেছিল। সেতুর মাধ্যমে অঞ্চল দুটি যুক্ত হয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং স্বনির্ভরতা অর্জনে বিরাট সুযোগ পেয়েছে। সামাজিকভাবে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যে দূরত্ব ও বৈষম্য বিরাজ করছিল তা নিরসন হবে। পদ্মা সেতু শুধু অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও এই সেতু দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক তৎপরতা ৭৩ দশমিক ৪ ভাগ বৃদ্ধি করবে পদ্মা সেতু। পায়রা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, পদ্মা সেতু দেশের কৃষি উন্নয়ন এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নে অপরিসীম ভূমিকা রাখবে। বিশেষত: দক্ষিণাঞ্চলের পেয়ারা, আমড়া ইত্যাদি ফলজ বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করে শিল্পায়নের বিশেষ ক্ষেত্র তৈরি করবে। ইপিজেড তৈরির ক্ষেত্রে এবং দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টিতে পদ্মা সেতুর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ইলিশ সম্পদ তথা সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বিপণনে সহজ যোগাযোগ মাধ্যম হবে পদ্মা সেতু।
কুয়াকাটা, সুন্দরবন, টুঙ্গিপাড়া, বাগেরহাট প্রভৃতি পর্যটন অঞ্চলের মধ্যে সহজ সংযোগ সৃষ্টি করার অন্যতম মাধ্যম হবে পদ্মা সেতু উল্লেখ করে মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, সারাদেশের পর্যটন খাতকে এই সেতু চাঙ্গা করবে। ফলে পর্যটন সংলগ্ন এলাকার জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। সেতুর সংযোগ সড়কের দুইপাশে বৃক্ষরোপন করা হলে এ অঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্য সুরক্ষায় সহযোগিতা করবে।
বিশেষ অতিথি অজয় দাস গুপ্ত বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ যেকোন মানদণ্ডেই মহৎ কর্মযজ্ঞ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ জনপদের উন্নয়নে সহায়ক হবে এই সেতু। বরিশাল অঞ্চল এই সেতুর সুবিধা কাজে লাগিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করবে। বরগুনা-পটুয়াখালীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে শক্তিশালী সমুদ্র অর্থনীতি।