নয়াবার্তা প্রতিবেদক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তার সরকারি বাসভবনে বিশ্রাম নিচ্ছেন। সকালে বাসায় চিকিৎসক এসে মন্ত্রীকে দেখে গেছেন। আপাতত তাকে বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাদ পড়ার খবর হয়ে ওঠে টক অব দ্য কান্ট্রি। পাশাপাশি কেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফর থেকে বাদ পড়লেন তা নিয়ে নানা আলোচনাও শোনা গেছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য দিনভর চেষ্টা করেও মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা অবশ্য জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি যাওয়া নিয়ে কয়েক দিন ধরেই ধোঁঁয়াশা পরিস্থিতি ছিল।
রাষ্ট্রীয় এমন গুরুত্বপূর্ণ সফরে সরকারপ্রধানের সাথে সাধারণত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। আব্দুল মোমেন রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন। সফর সংক্রান্ত বুকলেটেও সস্ত্রীক মন্ত্রীর নাম ছিল।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট ভারত সফর থেকে ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চট্টগ্রাম নগরীর জেএমসেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রাখার ব্যাপারে ভারতকে জড়িয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করা দরকার, তা করতে তিনি ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছেন। তার এমন বক্তব্য বাংলাদেশ ও ভারতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, তার বক্তব্য গণমাধ্যমে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। প্রতিবেশী বন্ধুদেশ ভারতকে জড়িয়ে এমন বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী মহলেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্পষ্টই জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য তার ব্যক্তিগত, এটি সরকার বা দলের বক্তব্য নয়। এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান তো পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আওয়ামী লীগের কেউ নন বলেও মন্তব্য করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও সৃষ্টি হয় উষ্মা। দলের সিনিয়র নেতারা মোমেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। এমনকি তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারেও কথা ওঠে।
এদিকে, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সফরটি দ্বিপক্ষীয় সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রভাবশালী প্রতিবেশী বন্ধুদেশে শীর্ষ পর্যায়ের এমন গুরুত্বপূর্ণ সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দুই দেশের মধ্যে অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর পরিস্থিতি হিসেবেই দেখেন দুই দেশের নীতিনির্ধারকরা। গত ২৫ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন তিনি দেখেছেন। তবে সেগুলো কতটা সঠিক, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সার্বিক প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সঙ্গী করার বিষয়ে দোটানায় ছিল সরকার। এই সফরে অস্বস্তি নিয়ে কোনো আলোচনায় বসতে চায় না দুই দেশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেষ মুহূর্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফর থেকে বাদ পড়লেন বলে মনে করছে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো। তাদের মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে শেষ মুহূ্র্তে সফর থেকে বিরত রাখা সরকারের কৌশলগত সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে অসুস্থতার কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি না যাওয়ার বিষয়টি তারা আজ (সোমবার) ভোর রাতে জানতে পেরেছেন। আর বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটটি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা ছাড়ার পর তারা তথ্যটি নিশ্চিত হয়েছেন। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি কেন যেতে পারলেন না তা নিয়ে তারা কোনো কথা বলেননি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি না যাওয়ার ব্যাপারে সাবেক কূটনীতিবিদরা বলছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অফিসিয়ালি অসুস্থতার কথা জানিয়ে থাকলে মন্ত্রীর সফরে না যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর বর্ষীয়ান কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসুস্থ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ছাড়া সরকারপ্রধানের সফর হতে পারে।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে অবস্থান করছেন।