
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে রাজধানীর গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’য় যান পাকিস্তানের এই উপপ্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাঁদের মধ্যে দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এ জেড এম জাহিদ বলেন, দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে, ভবিষ্যতে যাতে দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক আরও স্বাভাবিক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাতে সবাই মিলিতভাবে কাজ করতে পারে, সে কথা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তেমন কোনো কথা হয়নি বলে দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।
এ জেড এম জাহিদ বলেন, খালেদা জিয়া যেহেতু অসুস্থ, বাসায় আছেন, তাই তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে এবং কুশল বিনিময় করতে তাঁরা (পাকিস্তান প্রতিনিধিদল) এসেছিলেন। তাঁরা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পক্ষ থেকে ওনাকে (খালেদা জিয়া) শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খালেদা জিয়া ও ইসহাক দারের সাক্ষাতের সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ তিনজন এবং পাকিস্তান প্রতিনিধিদলে ছয়জন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে খালেদা জিয়ার চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
বৈঠক শেষে খালেদা জিয়ার চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে, এ বিষয় কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে এ জেড এম জাহিদ বলেন, ওনারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে বাংলাদেশ নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে এবং সেখানে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব নেতৃত্ব দেবেন এবং সেই নেতৃত্বেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এগিয়ে যাচ্ছে, সে কথা হয়েছে।
বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে এ জেড এম জাহিদ বলেন, বাংলাদেশ আগামী দিনে একটি সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সে কথা আলোচিত হয়েছে এবং সেটাকে সবাই প্রশংসা করেছে।
আলোচনায় সার্কের প্রসঙ্গ এসেছে উল্লেখ করে এ জেড এম জাহিদ বলেন, ‘তাঁরাও যেমন বলেছেন ম্যাডামও সার্কের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। সার্ক প্রতিষ্ঠাকালে কী অবস্থাটা ছিল এবং উনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে সার্কের যে ঘোষণা এবং পরবর্তীতে ওনার পাকিস্তান সফর এবং বাংলাদেশেও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সফর—এসব নিয়ে কথা হয়েছে।’
গতকাল শনিবার দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন ইসহাক দার। ঢাকা সফরের প্রথম দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে তিনি পৃথক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তিনি রাজনৈতিক পরিসরসহ নানা ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্বার্থের ভিত্তিতে এ সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে তিনি পাকিস্তানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
আজ সকালে ইসহাক দার বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠক করেন। পরে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। এরপর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পাকিস্তানের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। তাঁদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি, চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ), একটি কর্মসূচি (প্রোগ্রাম) সই হয়েছে।