নয়াবার্তা প্রতিবেদক : আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশই এসেছে হুন্ডিতে। ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে তুলনামূলকভাবে কম। হুন্ডিতে রেমিট্যান্স বেশি আসায় ওইসব ডলার চলে গেছে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে। এতে কার্ব মার্কেটে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। একই সঙ্গে চাহিদা ও দাম বেড়েছে।
রোজার আগে কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলারের দাম ছিল ১১৩ থেকে ১১৪ টাকা। বৃহস্পতিবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৬ থেকে ১১৮ টাকায়। রোজার শুরুতে কার্ব মার্কেটে ডলারের বেশ চাহিদা ছিল। ওই সময়ে দাম ১১৪ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে ছিল। অক্টোবরে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২০ টাকা উঠেছিল।
ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা। মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো বিক্রি করছে ১১২ থেকে ১১৩ টাকায়।
সূত্র জানায়, এবার ঈদের আগে ১ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দুই সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৬ কোটি ডলার। ঈদের আগে সাধারণত রেমিট্যান্স বাড়ে। এই বাড়ার মধ্যেই এলো মাত্র ৯৬ কোটি ডলার। চলতি মাসের বাকি সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যেতে পারে। এতে রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলারের নিচে নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্চে রেমিট্যান্স এসেছে ১০২ কোটি ডলার। এ মাসে রেমিট্যান্স গড় আরও কমে যাবে। তবে ব্যাংকাররা জানান অন্য কথা। তাদের মতে, অনেক বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। সেগুলোর একটি বড় অংশ নগদ আকারে ও হুন্ডির অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে এসেছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলএও) আগের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট রেমিট্যান্সের ৪০ শতাংশ আসে ব্যাংকিং চ্যানেলে। বাকি ৬০ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ নগদ আকারে ও বাকি ৩০ শতাংশ হুন্ডির মাধ্যমে। নগদ আকারে আসা রেমিট্যান্সের প্রায় পুরোটাই হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হয়।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বেশ কয়েক বছর আগে এক অনুষ্ঠানে তার ব্যক্তিগত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, রেমিট্যান্সের ৪২ শতাংশ আসে হুন্ডির মাধ্যমে। বাকি ৫৮ শতাংশ আসে ব্যাংকের মাধ্যমে।
সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রীও বলেছেন, হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স বেশি আসছে। এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ঈদে সাধারণত রেমিট্যান্স বাড়ে। এবারের রেমিট্যান্সের গতি-প্রকৃতি দেখলে মনে হয় ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়েনি। রেমিট্যান্স বেশি এসেছে হুন্ডির মাধ্যমে। কারণ রেমিট্যান্সপ্রবণ এলাকাগুলোতে নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকা, মানিকগঞ্জ। এসব এলাকায় নগদ টাকার চাহিদা বেশি বেড়েছে। হুন্ডিতে আসায় ডলার ব্যাংকে জমা হয়নি। কিন্তু নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া বেশকিছু ডলার কার্ব মার্কেটে চলে গেছে। যে কারণে কার্ব মার্কেটে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে।
বিশেষ করে যে প্রবাসী ঈদের ছুটিতে দেশে এসেছেন তাদের মাধ্যমে অন্য প্রবাসীরা নগদ আকারে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। সেগুলো ব্যাংকে না এসে কার্ব মার্কেটে চলে গেছে। কারণ কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ব্যাংকের চেয়ে ৭ থেকে ৮ টাকা বেশি। ব্যাংকে নগদ ডলার কেনা হয় ১০৬ থেকে ১০৭ টাকার মধ্যে। কার্ব মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে ১১৩ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে। ফলে বাড়তি লাভের আশায় অনেকেই ডলার কার্ব মার্কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকির ফলে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ব্যাংকের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। এখন আবার তা বেড়ে গেছে। এর কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্টরা জানান, রোজার শুরুর পর বাংলাদেশ থেকে ঈদের মার্কেট করতে কলকাতায় গেছেন অনেকে। অন্য সময়ের তুলনায় এবারের ঈদে এই প্রবণতা বেশি ছিল। এ খাতে ব্যাংক থেকে ডলার মেলেনি। ফলে কার্ব মার্কেট থেকেই ওই সব ডলার গেছে বেশি। যে কারণে রোজার শুরুতে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেড়েছে। ঈদের পর একটি শ্রেণি বিদেশ ভ্রমণে যাবে। এ খাতেও এখন ব্যাংক থেকে ডলার মিলছে খুবই কম। ফলে বেশিরভাগ ডলারই যাচ্ছে কার্ব মার্কেট থেকে। এ কারণে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশি।