নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা। এখানেই শাপলা ম্যানশনে অবস্থিত প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের শাখায় বোমা ফাটানোর ভয় দেখিয়ে ব্যাংক লুটের চেষ্টার সময় এক যুবককে আটক করে পুলিশ। আজ বুধবার বেলা পৌনে একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে যায় ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। তাঁরা হুড়োহুড়ি-দৌড়াদৌড়ি করে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যান। তবে নিরাপত্তাকর্মীরা কৌশলে যুবককে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন।
আটক যুবকের নাম আবু বকর (৩২)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর গাছা বোর্ডবাজার এলাকার বেলমন্ট গার্মেন্টসের চাকরিচ্যুত শ্রমিক বলে জানা গেছে। বসবাস করেন বোর্ডবাজারের বটতলা এলাকায়। তাঁর গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থানার বিশারীঘাটা এলাকায়। বাবা মৃত সেকান্দার আলী হাওলাদার।
খবর দেওয়া হয়েছিল ঢাকার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমেও (সিটিটিসি)। তাদের ১১ সদস্যের বোমা নিষ্ক্রিয় দল বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যে আইইডি ছিল, সেটি বিকেল চারটার দিকে নিষ্ক্রিয় করে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মো. আজাদ মিয়া বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, তিনটি পাইপের সমন্বয়ে একটি ইমপ্রোভাইসড ইলেকট্রনিক ডিভাইস (আইইডি) তৈরি করা হয়েছিল। এটিকে ‘পাইপ বোমা’ বলা হয়ে থাকে। ব্যাংকে বোমা ফাটানোর হুমকির খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। প্রথমে ব্যাংক ও মার্কেটের লোকজনকে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পরে বোমাটিকে নিষ্ক্রিয় করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের পর পুরো বিষয়টি জানা যাবে।
ঢাকার সিটিটিসির সদস্যরা বোমা নিষ্ক্রিয় করেন। এ সময় বোমাটির শব্দ পাওয়া যায়। এটি তিনটি পাইপের মাধ্যমে তৈরি, একে আইইডি বলা হয়। আটক যুবকের সঙ্গে জঙ্গি বা অন্য কোনো সংগঠন জড়িত কি না, সে বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেলা পৌনে একটার দিকে একজন লোক একটি কালো ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মোল্লা ফরিদ আহমেদের কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় ব্যবস্থাপককে তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে বোমা রয়েছে। তাৎক্ষণিক পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে বোমা বহনকারীর কাছ থেকে ব্যাগটি আলাদা করে ফেলে। পরে বোমা বহনকারী ব্যক্তিকে আটক করে বাসন থানায় নিয়ে যায়।
খবর দেওয়া হয়েছিল ঢাকার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমেও (সিটিটিসি)। তাদের ১১ সদস্যের বোমা নিষ্ক্রিয় দল বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেই ব্যাগে তিনটি পাইপের মাধ্যমে তৈরি যে আইইডি ছিল, সেটি বিকেল চারটার দিকে নিষ্ক্রিয় করে। এ সময় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মো. আজাদ মিয়া, উপপুলিশ কমিশনার শরিফুর রহমান, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আবু লাইচ মো. ইলিয়াস জিকু, বাসন থানার ওসি রফিকুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ব্যাংকে বোমা উদ্ধারের খবর পেয়ে ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তার শত শত লোক ওই এলাকায় ভিড় করেন। পুলিশ কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন ও জনসাধারণ চলাচল বন্ধ করে দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য পুরো এলাকাটি ঘিরে রাখেন।
ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী মো. শামীম প্রথম আলোকে জানান, বেলা পৌনে একটার দিকে ব্যবস্থাপকের কক্ষে ব্যাগ কাঁধে এক যুবক ঢোকেন। পরে তাঁর ব্যাগে বোমা আছে এবং এই বোমা ফাটানোর ভয় দেখিয়ে ব্যবস্থাপকের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন ওই যুবক। এ সময় তাঁরা নিরাপত্তাকর্মীরা ওই যুবককে ধরে ফেলেন। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে যুবকটিকে থানায় ধরে নিয়ে যায় এবং তাঁর সঙ্গে থাকা বোমা নিষ্ক্রিয় করে।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকার সিটিটিসির সদস্যরা বোমা নিষ্ক্রিয় করেন। এ সময় বোমাটির শব্দ পাওয়া যায়। এটি তিনটি পাইপের মাধ্যমে তৈরি, একে আইইডি বলা হয়। আটক যুবকের সঙ্গে জঙ্গি বা অন্য কোনো সংগঠন জড়িত কি না, সে বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মোল্লা ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা ভীষণ আতঙ্কিত হয়েছি। ভয়ে সবাই দ্রুত যে যার মতো বাইরে চলে গিয়েছিল। নিরাপত্তাকর্মীরা ওই যুবককে আটক করে পুলিশে দেন। তবে কোনো টাকাপয়সা লুট হয়নি।’