নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ আর এক সপ্তাহ চলবে। অর্থাৎ আসন্ন ঈদের আগেই শেষ হচ্ছে আপাতত দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান কার্যক্রম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক্ষেত্রে প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও সময়মতো দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন না ১৬ লাখ মানুষ।
এই টিকা পাওয়া না গেলে কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সবাই। সরকার প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া আগেই বন্ধ করেছে। টিকার জন্য নিবন্ধনও গতকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ সময়মতো না পেলে কী হবে, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দুই কোম্পানির টিকা হলে কোনো সমস্যা হবে কি না, এ নিয়ে চিকিত্সকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, যারা অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ অক্সফোর্ডেরই নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, প্রথম ডোজ নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে টিকা সংগ্রহের জন্য কিছুটা সময় পাচ্ছে বাংলাদেশ। আর যদি তিন মাসের মধ্যে টিকা না পাওয়া যায়, তাহলে অন্য কোম্পানির টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে নেওয়া যাবে কিনা কিংবা কতদিন পর নিতে হবে-এর পুরো বিষয়টি এখনো গবেষণাধীন। গবেষণার ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। গবেষণার ফলাফল পেলে আমরা মতামত দেবো। যুক্তরাষ্ট্রে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৬০ মিলিয়ন ডোজ টিকা উদ্বৃত্ত আছে। সেই টিকা পাওয়ার জন্যও চেষ্টা করা হচ্ছে।
আজ পরারাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার। সেখানে টিকা পাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হবে। এছাড়া আমেরিকা ও ইংল্যান্ডকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। সরকার দ্বিতীয় ডোজে ঘাটতি ১৬ লাখ টিকা সংগ্রহের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত করোনার টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘কোভিশিল্ড’ নামের এই টিকা তৈরি করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর গ্রহীতাকে একটি সনদ দেওয়া হচ্ছে। কোন প্রতিষ্ঠানের টিকা দেওয়া হয়েছে তার উল্লেখ থাকছে সনদে। বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে এ সনদ প্রয়োজনীয় দলিল হয়ে উঠছে। সেই ক্ষেত্রে দুটি প্রতিষ্ঠানের দুই ডোজ দেওয়া হলে তা আন্তর্জাতিকভাবে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা টিকা আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। চীনের টিকা আমরা আগামী ১০ মে’র মধ্যে পেয়ে যাবো বলে আশা করছি। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজের যে পরিমাণ ঘাটতি রয়েছে তা আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে আনার চেষ্টা করছি। এখনো কিছুটা সময় আমাদের হাতে রয়েছে, টিকা আসলেই দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, করোনার টিকা এক কোম্পানির প্রথম ডোজ নেওয়ার পর তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে না পারলে কী করতে হবে সেই বিষয়টি এখনো গবেষণা পর্যায়ে আছে। ফলাফল এলে বোঝা যাবে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজের যে পরিমাণ ঘাটতি শিগগিরই তা পূরণ হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ইপিআই) ডা. শামসুল হক বলেন, দ্বিতীয় ডোজে ঘাটতি রয়েছে ১৬ লাখ। এই ঘাটতি পূরণে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। প্রথম ডোজ নেওয়ার পর এন্টিবডি তৈরি হয়েছে। প্রথম ডোজ নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে। ইতিমধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার জন্য ইংল্যান্ড ও আমেরিকার সঙ্গে যোগযোগ করেছে সরকার। তাদের কাছে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। সময়মতো টিকা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, টিকা এক ডোজ নেওয়ার পর তিন মাস সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে। প্রথম ডোজ যে কোম্পানির টিকা নেওয়া হয়েছে, তাকে দ্বিতীয় ডোজ সেই কোম্পানির টিকা নিতে হবে। তবে দ্বিতীয় ডোজ অন্য কোম্পানির নেওয়া যাবে কিনা সেটি এখন হিউম্যান ট্রায়ালে রয়েছে, গবেষণা চলছে। ফলাফল এখনো আসেনি। তিনি বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজে চেষ্টা করছেন। হয়তো তিনি তা পেয়ে যাবেন।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলগমীর বলেন, প্রথম ডোজ যে কোম্পানির টিকা, দ্বিতীয় ডোজ সেই কোম্পানির টিকা নিতে হবে। এখন পর্যন্ত এটাই সিদ্ধান্ত। গবেষণা পরিবর্তন হলে সেটা জানানো হবে। তিনি বলেন, টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে টিকা চলে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, টিকা নেওয়ার পরও সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।