নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : গোপালগঞ্জে মাকে হত্যা ও প্রমাণ লোপাটের দায়ে আকাশ পান্ডে (১৬) নামে এক কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আকাশ পান্ডে কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামের মনোরঞ্জন পান্ডের ছেলে। সে ভাঙ্গারহাট তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গত বৃহস্পতিবার জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ, কালিকাবাড়ি ও ভাঙ্গারহাটে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। পরে শুক্রবার বিকেলে গোপালগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের আদলতে আকাশ পান্ডে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
আকাশ পান্ডে মাকে হত্যার পর প্রমাণ লোপাটের জন্য লাশ পুড়িয়ে দিয়েছে জানিয়ে আদালতকে বলে, গত ২৬ জুন রাত সাড়ে ১০ টায় বাড়িতে ফিরে আমি ভাত খেতে চাই। এ সময় ছোট বোন ঘরে ঘুমিয়ে ছিলো। বাবা ভাঙ্গারহাট বাজারের নৈশ প্রহরীর ডিউটিতে ছিলেন। মা হাসি রানী পান্ডে আমাকে ভাত দিতে গিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হঠাৎ প্লেট ছুঁড়ে মারেন। ভাতের পাতিলে লাথি মেরে ফেলে দেন। এক পর্যায়ে আমি চিৎকার চেঁচামেচি করলে মা বটি দিয়ে আমাকে কোপাতে আসে। এসময় আমি জ্বালানী কাঠ দিয়ে মায়ের মাথায় পেছনে আঘাত করি। এতে মায়ের মৃত্যু হয়। আমি ভয় পেয়ে যাই। এর আগে প্রবল বৃষ্টি হয়। তাই আশপাশে কোন মানুষ ছিলো না। পরে লাশ কোলে করে নৌকায় তুলি। বাড়ি থেকে অর্ধ কিলোমিটার দূরে নিয়ে একটি উঁচু জায়গা দেখে লাশ নৌকা থেকে নামিয়ে রাখি। পরে পাশের বাড়ি থেকে লুকিয়ে পাটখড়ি ও জ্বালানী কাঠ এবং নিজেদের ঘর থেকে কেরসিন নিয়ে গভীর রাতে মায়ের লাশ পুড়িয়ে দেই। পরে মাকে পোড়ানো কয়লা, ছাই, নৌকা পরিষ্কার ও গোসল করে বাড়ি ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়ি।
হত্যাকাণ্ডের শিকার মা হাসি রানী পান্ডে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামের মনোরঞ্জন পান্ডের স্ত্রী ও মাদারীপুর সদর উপজেলার কলাগাছিয়া গ্রামের জুড়ান বাড়ৈর মেয়ে।
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, আকাশ পান্ডের বাবা মনোরঞ্জন পান্ডে (৩৭) ভাঙ্গারহাট বাজারে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করেন। গত ২৬ জুন রাতে নৈশ প্রহরীর ডিউটি শেষে ২৭ জুন সকালে মনোরঞ্জন বাড়িতে ফিরে স্ত্রীকে ঘরে দেখতে না পেয়ে ছেলে-মেয়ের কাছে জানতে চায় তাদের মা কোথায় গেছে? উত্তরে ছেলে-মেয়ে বলে মা মামা বাড়িতে গেছে। মনোরঞ্জন তার শশুর বাড়িসহ আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে স্ত্রীর সন্ধান পাননি।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এ ঘটনায় মনোরঞ্জন গত ১ জুলাই কোটালীপাড়া থানায় শ্বশুর-শাশুড়িসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অবার একই ঘটনায় মনোরঞ্জন ৮ জুলাই কোটালীপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি ( জিডি) করেন। কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জিডির তদন্ত করে এ ঘটনার কোন কিনারা করতে পারেননি। শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় শ্বশুর জুড়ান বাড়ৈ ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রইব্যুনালে জামাতা মনোরঞ্জন, তার ভাই, ভাবি, বোন ও বোনের স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ বৃহস্পতিবার গৃহবধূ হাসি রানী পান্ডে হত্যারহস্য উদঘাটন করে।