নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মার্কিন কংগ্রেসের যৌথসভায় জো বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। আগামি ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে আর কোনো বাধা নেই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের।
বাইডেন শপথ নেওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবি উঠেছে। পার্লামেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের বিক্ষোভ, ভাংচুর ও সন্ত্রাসী সহিংসতায় এ পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু এবং ১৪ জন পুলিশ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি’র অবরুদ্ধ ক্যাপিটল হিল বা সংসদ ভবনের ভেতরে দেশটির আইনপ্রণেতারা আর বাইরে কারফিউ। এমন এক শাসরুদ্ধকর অবস্থায় স্থানীয় সময় বুধবার রাতভর ইলেকট্রোরাল কলেজ ভোট গণনা শেষে জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট ও কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী ঘোষণা করা হয়।গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষায় মার্কিন নেতাদের এ অভূতপূর্ব রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেন জো বাইডেন।
এর আগে রিপাবলিকান সদস্যদের দাখিল করা এরিজোনা ও পেনসিলভেনিয়ার ফলাফল বাতিলের আবেদন নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক ও ভোটাভুটি শেষে তা খারিজ হয়ে যায়। পরে এক এক করে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ইলেকট্রোরাল ভোট সার্টিফাইট বা সত্যায়ন করে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন অধিবেশনের সভাপতি ভাইস প্রেসিডন্ট মাইক পেন্স। এতে বাইডেনে-হ্যারিসের প্রাপ্ত ৩০৬ ইলেকট্রোরাল ভোট এবং ট্রাম্প-পেন্সের ২৩২ অক্ষুণ্ন থাকে। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ পরিচালনা করেন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। হাউস ও সিনেট যৌথ অধিবেশন শুরু হয় স্থানীয় বুধবার রাত ৮ টায় এবং তা শেষ হয় পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। যদিও রিপাবলিকান সিনেটরদের জর্জিয়া এবং উইসকনসিনের ভোট বাতিলের দাবি কোন প্রকার ভোটাভুটি ছাড়াই খারিজ হয়ে যায়। আবার অনেক রিপাবলিকান সদস্যরা তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের সহিংস বিক্ষোভ ও হামলার পর উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনায় খোদ রিপাবলিকান দলের মিট রমনি, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সহ অনেকেই ট্রাম্পকে দায়ী করে তার বিচার দাবি করেছেন। নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবন্দ। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই আরো প্রায় দু’সপ্তাহ ক্ষমতায় থাকছেন। ইলেক্ট্রোরাল ভোট সত্যায়নের প্রক্রিয়া বানচাল করতে ব্যর্থ হয়ে ট্রাম্প তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবারও কোনো চক্রান্ত করতে পারেন এমন আশঙ্কা করেছেন অনেকে। তাই আমেরিকার প্রথম দুই নারী মুসলিম কংগ্রেস সদস্যের একজন ইলহান ওমর সহ অনেক নেতা ট্রাম্পকে ইমপিচমেন্ট করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত হাউসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি জানিয়েছেন, যারা এ সংহিংস হামলার জন্য দায়ী তাদের শাস্তি পেতে হবে। সংসদ ভবনে এমন ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় হতবাক দেশটির হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটিও। কমিটি বলেছে, পার্লামেন্ট ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের সহিংস বিক্ষোভ ও হামলার দায় ট্রাম্পেরই। ট্রাম্প টুইটারে একের পর এক বিতর্কিত পোস্ট করেছেন। এসব আচরণ প্রমাণ করে তিনি মানসিকভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের প্রতি ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান জানিয়েছে হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটি।
ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রাম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। ক্যাপিটাল হিলে হামলার ঘটনার পরে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করেছেন হোয়াইট হাউজের ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজারও। এমন অবস্থায় ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে? তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।