বিশেষ প্রতিনিধি : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিবিদদের কূটনীতিক পাড়ায় ছোটাছুটি বেড়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ আজ বুধবার দুপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় যায়। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আমন্ত্রণে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় দুই পক্ষের আলোচনা এসেছে। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎ হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন যে বিরোধী দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী, সেটা জানতে চান পিটার হাস।
জবাবে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি আওয়ামী লীগেরই আন্দোলনের ফসল। কিন্তু বিএনপি ২০০১ ও ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অপব্যবহার করেছে। এর ফলেই এক–এগারোর মতো অনির্বাচিত সরকার এসেছে। এখন পাকিস্তান ছাড়া গণতান্ত্রিক বিশ্বে এ ধরনের সরকারের অস্তিত্ব নেই। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না—এটা পরিষ্কার। তবে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সূত্র আরও জানায়, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে, আইনি ও আর্থিকভাবে নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন। কমিশনকে বর্তমান সরকার শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে। এ ছাড়া অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নির্বাচনে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো যে সুষ্ঠু হয়েছে, তা তুলে ধরা হয়।
সূত্র আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই বেশি শুনতে চেয়েছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তারা প্রত্যাশা করে।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই দিন ওবায়দুল কাদের বৈঠক শেষে বেরিয়ে বলেছিলেন, তারা চায় আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবেও অনেক কূটনীতিক সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতিনিধিদল নিয়েও বৈঠক করছেন। ভবিষ্যতেও এ ধরনের বৈঠক-সাক্ষাৎ হতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে বৈঠক সম্পর্কে উদ্ধৃত হয়ে কেউ কথা বলতে চাননি।
বিএনপিও সম্প্রতি একাধিকবার মার্কিন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতারা একাধিকবার এসব বৈঠকের সমালোচনা করে ‘বিদেশিদের কাছে বিএনপি ধরনা’ দিচ্ছে বলে সমালোচনা করেন। এর মধ্যেই বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগেরও বৈঠক-সাক্ষাৎ বেড়েছে।