নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : যশোরে ‘পুলিশের নির্যাতনে’ দু’টি কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়া কলেজছাত্র ইমরান হোসেনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা এবং এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া রিট পিটিশনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার বিচারপতি জেবিএম হাসানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশে, আগামী ২৮ জুন মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করাসহ ওই তারিখের মধ্যে যশোরের সিভিল সার্জনকে কলেজছাত্র ইমরানের শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন এবং পুলিশ সুপারকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে আহত ইমরানের বাবা নিকার উদ্দিন জানান, যশোরের চিকিৎসায় তার ছেলে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের দ্বিতীয় তলায় ২০০ নং ওয়ার্ডের ১২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি বলেন, আর্থিক সঙ্কটের কারণে তিনি ছেলেকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না। নিজের সমস্ত সঞ্চয় আর গ্রামের মানুষের কাছে হাত পেতে পাওয়া সামান্য টাকায় যশোর ও ঢাকায় ছেলের চিকিৎসা চালাচ্ছেন।
ইমরানের পরিবার অভিযোগ, গত ৩ জুন সন্ধ্যায় সলুয়া বাজার থেকে একবন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন যশোর সদরের শাহাবাজপুরের বাসিন্দা ও স্থানীয় কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইমরান হোসেন । যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সদরের সাজিয়ালি ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা তাদের গতিরোধ করে ব্যাগ তল্লাশি শুরু করেন। এতে ভয়ে ইমরান দৌড় দিলে পুলিশ ধাওয়া করে তাকে ধরে ফেলে। এসময় পুলিশের বেধড়ক মারপিটে জ্ঞান হারান তিনি। পরে একটি ফার্মেসিতে চিকিৎসা নিয়ে জ্ঞান ফেরে। এসময় পুলিশ তার পকেটে গাঁজা দিয়ে আটকের কথা বলে। পরে ৬ হাজার টাকা নিয়ে তারা ইমরানকে ছেড়ে দেয়। এসময় পুলিশ ইমরানকে মারপিটের ঘটনা কাউকে বললে রিমান্ডে নিয়ে ফের মারপিটের হুমকি দেয়। এরপর তার অবস্থার অবনতি হলে গত ৭ জুন তাকে যশোরের কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ইমরানের মা বুলবুলি বেগম বলেন, রাস্তায় ফেলে লাথি ও মারধরে তার ছেলের এমন অবস্থা হয়েছে।
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. উবায়দুল কাদির উজ্জ্বল বলেন, ইমরানের দু’টি কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। ফলে তাকে ডায়ালসিস দেওয়া হয়।
কুইন্স হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক মিঠু সাহা জানান, এ হাসপাতালে ডায়ালসিসসহ সার্বিক চিকিৎসায় ইমরানের কিডনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও প্রচণ্ড খিচুনি ও নিয়ন্ত্রণহীন প্রসাব হতে থাকে। সে কারণে চিকিৎসক তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন।
এদিকে নির্যাতনের ঘটনাটি গত ৯ জুন কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সুপ্রীম কোর্টের দু’জন আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ূন কবীর পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওসার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ক্ষতিপূরণ ও বিবাদীকে যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয়ভার বহনের নির্দেশ চেয়ে ১৮ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এতে বিবাদী করা হয় স্বরাষ্ট্র সচিব, যশোরের পুলিশ সুপার, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আইজিপি, সিভিল সার্জন ও যশোর কোতয়ালি থানার ওসিকে।
এদিকে ঘটনার শুরু থেকে অভিযুক্ত সাজিয়ালি ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ইমরানকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। তারা দাবি করেন, পুলিশ ইমরানকে রাস্তা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আলমগীরের কাছে নিয়ে যায়। তার পকেটে ১০ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেলেও স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির অনুরোধে তাকে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়া হয় ।
বিষয়টি তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) গোলাম রব্বানীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন যশোরের পুলিশ সুপার। ১৫ জুন দাখিল করা ওই কমিটিও তদন্ত প্রতিবেদনেও ইমরানকে পুলিশি নির্যাতন করা হয়নি বলে উল্লেখ করেন। তবে ঘটনার পর অভিযুক্ত দুই এএসআইসহ সাজিয়ালি ক্যাম্পের চার পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে মঙ্গলবার আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ূন কবীর পল্লব। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওসার। রাস্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।