নয়াবার্তা প্রতিবেদক : বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিহত করতে এগিয়ে আসার জন্য দলীয় নেতাকর্মী ও দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন চায় না। দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। কয়েকজন দুর্বৃত্তের নির্বাচন বানচাল এবং জনগণের ভোটের অধিকার ও ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। যেকোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যেখানেই অগ্নিসন্ত্রাস ঘটবে, সেখানেই বিএনপি-জামায়াতের দৃর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে ধরিয়ে দিতে হবে। শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মজুদদারদের খুঁজে বের করার আহ্বান: খাদ্যপণ্য মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যপণ্য থাকা সত্ত্বেও বাজারে না এনে জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা যারা করে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। ব্যবস্থা নিতে হবে। খাদ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, দেশে চাল-ডাল, আলুসহ সবকিছুর উৎপাদন বেড়েছে। তাহলে কিসের অভাব হবে? এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে আমরা খাদ্যপণ্য কিনে আনছি। কিন্তু সেটা মানুষের কাছে পৌঁছাবে না কেন? এগুলোর পেছনে কারা আছে? মজুদ করে রেখে দেবে কিন্তু বাজারে আনবে না। না এনে দাম বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে। এটাই তারা করে যাচ্ছে। এই ধরনের মজুদ যারা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতেই আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ রাখতে হবে, যাতে দেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ ব্যাহত করতে না পারে।
আমাদের বিদেশি মুরুব্বি নেই: প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিদেশি মুরুব্বি নেই, আমাদের আছে জনগণ। তাই জনগণকেই এসব আগুন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যাতে ওইসব দুষ্কৃতিকারী এ দেশের নির্বাচন কখনো বানচাল করতে না পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন হলে সিট পাবে না, এটা জেনে বিএনপি নির্বাচনে আসবে কিনা সন্দেহ। এরপরও যদি আসে তবে অতীতের মতো মনোনয়ন বাণিজ্য করতে আসবে। এরা নির্বাচন নয়, নির্বাচন বানচালের জন্য আরও অনেক কিছু ঘটানোর চেষ্টা করবে। খুন-সন্ত্রাস ছাড়া এরা অন্য কিছু বোঝে না। তাই দেশের এত উন্নয়ন ও অর্জনগুলো ধ্বংস করে দিতে চায়।
নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিরোধিতা করা যাবে না: আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিভাজন না করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, এ কথা ভাবলে চলবে না, ওরা (বিএনপি) তো নির্বাচনে আসবে না। একটা সিট না পেলে কী হবে? বাকিগুলোতে তো জিতে সরকারে আসব- এ চিন্তা যেন কারও মাথায় না থাকে। এই চিন্তা সর্বনাশ করে দেবে। কাজেই আমরা মনোনয়নে যে সিদ্ধান্ত দেব, সেটা মানতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আবারও ভোটের মাধ্যমে সরকারে আসতে হবে।
২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে সহিংসতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আজ বিএনপির যে অগ্নিসন্ত্রাস, তাদের যে বীভৎস চেহারা, তারা পিটিয়ে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করে। একজন নিরীহ পুলিশ তার কি অপরাধ ছিল? তাকে ওইভাবে অমানবিকভাবে হত্যা করল। নির্বাচন বানচাল ও সরকার পতন আন্দোলনের নামে ২০১৩-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের উদাহরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা ২০১৩ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করার জন্য একই ঘটনা ঘটিয়েছে, ২০১৫ সালেও ঘটিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা, আগুনে পোড়ানো, হাজার হাজার গাছ ও রাস্তা কেটে একটা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ যখন প্রতিরোধ করেছিল তখনই তারা থেমেছে।
সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করতে বিএনপি আবারও অবরোধ দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সময় এসে গেছে, এই অগিসন্ত্রাসীরা যে যেখানে থাকুক, যারাই এভাবে আগুন দেবে, জনগণের ওপর অত্যাচার করবে, গাড়ি-বাস-ট্রাকে আগুন দেবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস যারা করে, তাদের ধরে ওই আগুনে ফেলতে হবে। যে হাতে আগুন দেয় ওই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর। তা না হলে তাদের শিক্ষা হবে না। কাজেই যে যে এলাকায় এসব অগ্নিসন্ত্রাস ঘটবে, সে সে এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত কর্মীদের খুঁজে বের করতে হবে, ধরিয়ে দিতে হবে। কারও ওপর নির্ভর করলে হবে না, জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন: আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচন করলে তারা কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ২০১৮ নির্বাচনে তো মাত্র ২৯টা সিট পেয়েছিল। এখন তাদের অপকর্মের জন্য মানুষ আরও বিমুখ। বিএনপি কাকে নিয়ে নির্বাচন করবে? নির্বাচন করলে তাদের নেতা কে? কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে? কাদের দিয়ে মন্ত্রিসভা করবে? বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা তো এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আর এখন তো অসুস্থ। তাঁর ভাই-বোন এবং বোনের জামাই এসে কান্নাকাটি করায় আমি তাঁর সাজাটা স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার আর ইচ্ছেমতো চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, মানিলন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িত, তাতে তো সন্দেহ নেই। এই তারেক রহমান তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান। এখন নাকি ওখানে বসে জুয়া খেলেন আর পাউন্ড ইনকাম করেন। আর ওখান থেকে জ্বালাও-পোড়াও করার নির্দেশ দেন। বিএনপিতে আর কোনো নেতা নেই? ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকেই তারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতেও কথা বলে না বিএনপি: ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনের হাসপাতালেও বোমা মারছে ইসরায়েল। মা ভেবেছিলেন, সন্তান নিয়ে হাসপাতালে নিরাপদ থাকবেন। কিন্তু সেখানেও বোমা হামলা করছে ইসরায়েলিরা। আমরা খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী পাঠিয়েছি। ঢুকতে দিচ্ছে না বলে পাশের দেশ মিশরে রেখেছি। আমাদের দেশে বিএনপিও হাসপাতালে হামলা করেছে। তারা ফিলিস্তিন ইস্যুতেও কোনো কথা বলে না।
বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের কথা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে এই ঘটনার সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন এমন অভিযোগও পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগার সব থেকে নিরাপদ যায়গা, সেখানে গিয়েও নির্মম হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এসব হত্যার পেছনে চক্রান্তকারী খুনি মোশতাক। মোশতাকের মূল শক্তি ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি ছিলেন এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত।
১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড থেকেই হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধ্বংস শুরু। জিয়াউর রহমান মুখে বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তিনি যদি মুক্তিযোদ্ধা হবেন, তাহলে তার আমলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ হয় কীভাবে? স্বাধীনতার প্রেরণা ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ হয় কীভাবে?
সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, শাজাহান খান, শহীদ জাতীয় নেতা তাজউদ্দিন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, শহীদ জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নুর লিপি এমপি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।