রাজশাহীতে আটক ভারতীয় জেলেকে কারাগারে প্রেরণ

নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : রাজশাহীর চারঘাটের পদ্মা-বড়ালের মোহনায় ইলিশ ধরতে আসা আটক ভারতীয় জেলে প্রণব মন্ডলকে পৃথক মামলায় তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে পৃথক মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে বিজিবির পক্ষ থেকে চারঘাট থানায় অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে বেআইনিভাবে ইলিশ মাছ শিকারের অভিযোগে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার রাতেই ভারতীয় নাগরিক প্রণবকে চারঘাট থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি।

চারঘাট থানার ওসি সমিত কুমার কুন্ডু বলেন, ‘বিজিবির হাবিলদার হুমায়ুন কবির পৃথক মামলা দায়ের করেন। একটি মামলায় প্রণবের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের এবং আরেকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে বেআইনিভাবে ইলিশ মাছ শিকারের অভিযোগ আনা হয়েছে। উভয় মামলায় প্রণব মন্ডলকে গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

জানা যায়, পদ্মায় ইলিশ শিকারের সময় গ্রেফতার প্রণব মন্ডলের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানার ছিড়াচর গ্রামে। তার বাবার নাম বসন্ত মন্ডল। বৃহস্পতিবার তাকে আটকের জের ধরে বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এতে নিজেদের একজন সদস্য নিহত এবং আরেকজন হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার দাবি করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে বিজিবি বলছে, বিএসএফের গুলি বর্ষণের পর আত্মরক্ষার্থে তারাও (বিজিবি) ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে। গুলিতে ঘটনাস্থলে কারও নিহত বা আহত হওয়ার বিষয়টি বিজিবি এখনো নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে পরে তদন্ত করে দেখা হবে বলেও বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে গুলি বিনিময়ের ঘটনায় দিনভর উত্তেজনা শেষে বিকেলে পতাকা বৈঠক থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার রাতে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন রাজশাহীস্থ বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে চারঘাট উপজেলা সদরের পশ্চিমে পদ্মা ও তার শাখা বড়াল নদের মোহনার শাহরিয়ার খাল এলাকায় বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এলাকাটি ভারতের চর পাইকমারি সীমান্ত থেকে ৬৫০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে। এই ঘটনার পর বিকালে বিজিবি ও বিএসএফের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পতাকা বৈঠকে বিএসএফের পক্ষ থেকে তার কাছে দাবি করা হয়েছে গুলি বিনিময়ে তাদের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন এবং আরেকজন আহত হয়েছেন। তবে তারা হতাহতের কোনো ছবি, অডিও কিংবা ভিডিও দেখায়নি, এমনকি তাদের নাম-পরিচয়ও প্রকাশ করেনি। ফলে বিজিবি বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি।’

এ সময় ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিজিবি অধিনায়ক বলেন, ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযানে যায় বিজিবি। এ সময় মাছ ধরার সময় তিনজন জেলেকে আটকের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুইজন জেলে পালিয়ে যান। তবে ভারতীয় নাগরিক প্রণবকে বিজিবি জালসহ আটক করে নদীর এপারে নিয়ে আসে। ঘটনার কিছুক্ষণ পর ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাগমারী ক্যাম্প থেকে চার সদস্যের একটি টহল দল স্পীড বোট নিয়ে অনুমতি ছাড়া শূন্য লাইন অতিক্রম করে অবৈধভাবে বাংলাদেশের ৬০০ থেকে ৬৫০ গজ ভেতরে নদীর এপারে বিজিবি টহল দলের নৌকার কাছে আসে এবং আটক ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দিতে বলেন।

বিজিবি টহল দল পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিককে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএসএফের কাছে হস্তান্তরের কথা জানায়। কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা ভারতীয় নাগরিককে বিজিবির কাছ থেকে নিয়ে মারধরের এক পর্যায়ে তাকে ছিনিয়ে স্পীডবোটে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে লক্ষ্য করে আনুমানিক ৬ থেকে ৮ রাউন্ড ফায়ার করে। এসময় আত্মরক্ষার্থে বিজিবির টহলের সদস্যরাও ফাঁকা ফায়ার করে। তখন বিএসএফ সদস্যরা ফায়ার করতে করতে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

অন্যদিকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, নিহত বিএসএফ সদস্য বিজয় ভান সিং এবং আহত বিএসএফ সদস্য রাজবীর সিং। রাজবীর বিএসএফের ১১৭ নম্বর ব্যাটেলিয়নের হেড কনস্টেবল। বিএসএফের বরাত দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বিজিবি অধিনায়ক আরও জানান, পতাকা বৈঠকে উভয়পক্ষ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে একমত হন। এছাড়া এ বিষয়ে আরও আলোচনার জন্য সীমান্তে দ্রুতই আরও পতাকা বৈঠকের বিষয়েও বিজিবি-বিএসএফ সম্মত হয়েছে।

Share