নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুল ইসলাম এক তরুণকে ফোন করে নিজের পরিচয় দেন। পরিচয় পেয়েই ওই তরুণ ইউএনওকে বলেন, ‘স্যার, জানি আমি করোনায় আক্রান্ত। চিন্তা করবেন না, আলাদা আছি। রাস্তায় অপেক্ষা করছি, আমাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার একটি গ্রামের ২০ বছর বয়সী ওই তরুণ জাজিরায় সরকারের একটি বড় প্রকল্পের শ্রমিক। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি প্রকল্প এলাকায় এসে মুঠোফোনে জানতে পারেন, তাঁর করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল পজিটিভ। নওগাঁর মহাদেপুরের ইউএনও ওই তরুণের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর জাজিরার ইউএনওকে জানান। এরপর ওই তরুণের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাজিরা উপজেলা ও স্বাস্থ্য প্রশাসন। জাজিরার নাওডোবা এলাকায় পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজার পাশ থেকে অপেক্ষারত ওই তরুণকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
আজ বুধবার দুপুরে ওই তরুণ আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে মুঠোফোনে বলেন, তিনি পাঁচ মাস ধরে জাজিরার নাওডোবায় একটি প্রকল্পের ক্রেনের চালক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে ওই প্রকল্পের ক্রেনের কাজ বন্ধ রাখা হয়। প্রকল্প এলাকার পাশে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন তিনি। চার দিন ওই বাড়িতে অবস্থান করে ২৯ এপ্রিল একটি মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে নওগাঁয় গ্রামের বাড়িতে চলে যান।
ওই তরুণ বলেন, ‘গত ২ এপ্রিল মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিই। গতকাল বাড়ি থেকে প্রকল্প এলাকায় ফিরে আসি। ফেরার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মহাদেপুর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ফোনে আমাকে জানানো হয়, আমার করোনা পজিটিভ। তাঁরা আমার অবস্থান জেনে নিয়ে সেখানেই অপেক্ষা করতে বলেন। আমি ভ্যান থেকে নেমে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার পাশে অপেক্ষা করতে থাকি।’
ওই তরুণ আরও বলেন, ‘রাত সাড়ে আটটার দিকে জাজিরার ইউএনও স্যার আমাকে ফোন করে আমার অবস্থান জানতে চান। তিনি ফোন করলে আমি তাঁকে জানাই পজিটিভ হওয়ার খবর আমি পেয়েছি। এখানে আমার আলাদা থাকার ব্যবস্থা নেই, আমাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। রাতেই আমাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। আমি এখানে ভালো আছি।’
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘নওগাঁর এক তরুণ করোনাভাইরাসে আক্রন্ত হয়ে জাজিরার নাওডোবায় এসেছেন—এমন তথ্য ইউএনও দেওয়ার পর ওই তরুণের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি। তাঁকে ফোন করার পর আমি তাঁর সচেতনতা দেখে অভিভূত হই। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর যে স্থানে বসে পেয়েছেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোথায়ও যাননি। অন্যরা আক্রান্ত হতে পারে ভেবে রোজা থাকার পরও ইফতার করতে কোথাও যাননি। জেলা হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।’
জাজিরার ইউএনও জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওই তরুণের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করি। আমার ফোন পেয়ে ওই তরুণ স্বেচ্ছায় হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলেন। তখন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে জেলা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়।’