নয়াবার্তা প্রতিবেদক : পবিত্র রমজান মাস। এর মধ্যে আবার ১৪ দিন ধরে দেশে টানা তাপপ্রবাহ চলছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। এতে হাঁসফাঁস অবস্থা জনজীবন। রেকর্ড গরমে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট। এতে এসব এলাকার বাসিন্দারা পড়েছেন বেশ অস্বস্তিতে। আবার কোনো কোনো এলাকায় তো কয়েক বছর ধরে টানা পানির সমস্যা। সেই সমস্যা রোজার শুরু থেকে চরম আকার ধারণ করেছে। এলাকাবাসী জানান, ঢাকা ওয়াসার আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না।
রায়েরবাজার, শনির আখড়া, দনিয়া, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, আদাবর, মোহাম্মদপুর ও মধ্যবাড্ডা ঘুরে দেখা যায় পানির সংকটের চিত্র। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা পানির সংকটে ভুগছেন।
রায়েরবাজারে দেখা যায়, ওয়াসার লাইনে পানি মিলছে না। ফলে বিকল্প হিসেবে অন্য জোনের বাসিন্দাদের বাসা থেকে পানি এনে কোনো রকমে জীবন চালাতে হচ্ছে।
বাসিন্দারা বলছেন, দুই বছর ধরে টানা পানির সমস্যা থাকলেও রোজার শুরু থেকে তা চরম আকার ধারণ করে। সমস্যা সমাধানে ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী বা উপ-প্রধান কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেও মিলছে না সাড়া।
রায়েরবাজারের হাশেম খান রোড, নিমতলি, টালি অফিস, হজরত ওমর গলি এলাকায় পানি না থাকায়, দোকান থেকে বোতলজাত পানি কিনে সারতে হচ্ছে জরুরি কাজ।
এলাকাবাসী বলছেন, ওয়াসার মডস জোনের কাছাকাছি যাদের বাসা, তারা খুব সামান্য পানি পায়। এই পানি দিয়ে বাসার প্রয়োজনীয় কাজ করা যায় না।
হজরত ওমর গলিতে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আমির হোসেনের বাড়ি। তিনি বলেন, সারাদিন পানি নেই। আশপাশের এলাকা থেকে পানি এনে বা দোকান থেকে কিনে রান্না ও খাওয়ার কাজ করতে হচ্ছে। রাতে অনেক সময় পানি আসে, তবে পরিমাণ খুব কম।
তিনি বলেন, পানি তুলতে সারারাত মটর ছেড়ে রাখি। তারপরও ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে এক বালতি করে পানি দেওয়া যায় না। ওয়াসাকে আমরা পানির বিল সময়মতো দেই। তবুও ঠিকঠাক পানি পাওয়া যায় না। এদিকে মটর ছেড়ে রাখার কারণে মটরও নষ্ট হয়ে যায়। ওয়াসায় আমরা দরখাস্ত করেছি। তারা দেখবে বলেছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত আসেনি।
পানির সংকটের বিষয়ে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন বলেন, এই এলাকায় পানির সংকট দীর্ঘদিনের। জায়গা না থাকায় এখানে পাম্প বসাতে পারছি না। ওয়াসা আমাদের কাছে পাম্পের জন্য জায়গা চায়।
দনিয়ার দোলাইপাড় এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, কোনোদিন একবেলা তো কোনোদিন দুই বেলা পানি আসে। পানির পরিমাণও কম। চাতক পাখির মতো পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
একই এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, পানির খুব সমস্যা। কোনোদিন দুপুরে, আবার কোনোদিন ইফতারের সময় পানি আসে। সারাদিন পানি থাকে না। প্রচণ্ড গরমে এমনিতেই জীবন অতিষ্ঠ, তার ওপর ইফতার ও সেহরির সময় পানি না থাকা অমানবিক। এ বিষয়ে ওয়াসায় জানিয়েও লাভ হয়নি।
দনিয়ার সরাই জামে মসজিদ এলাকার বাসিন্দা বিপ্লব জানান, দীর্ঘদিন ধরে পানির সংকট থাকলেও ওয়াসা থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। টাকা দিয়ে ওয়াসার গাড়ি আনতেও পদে পদে পোহাতে হয় ভোগান্তি।
এ বিষয়ে ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টি কম, এরমধ্যে জনসংখ্যা ও চাহিদা বাড়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নামছে। এজন্য অনেক পানির পাম্প বিকল হয়ে পড়েছে। এছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণেও পানির উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় নতুন পানির লাইন বসানোর কাজ চলছে, এজন্য কিছু এলাকায় পানির সংকট হতে পারে। আবার অনেক এলাকায় পাম্প বসানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রেশনিং করেই চলতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় এখন ২৪ ঘণ্টা পানি পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রচণ্ড গরমে লোডশেডিং হচ্ছে, এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কিছু জায়গায় সমস্যা হতে পারে।
তিনি বলেন, জনসংখ্যা বাড়ার ফলে রাজধানীতে নতুন নতুন ভবন হচ্ছে। পানির চাহিদা বাড়ছে। অপরদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে, পানির উৎপাদনও কমছে। পাশাপাশি বৃষ্টি কম। ভূমির ওপর কংক্রিটের আচ্ছাদন বেড়ে যাওয়ায় পানির রিচার্জ কম। ওয়াসার পাম্প বসানোর নতুন জায়গা পাচ্ছি না। আর সরকারের নীতি হচ্ছে তারা পাম্পের জন্য জায়গা কিনবে না।
এদিকে রোববার (১৬ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৬৫ সালের পর অর্থাৎ গত ৫৮ বছরে এটিই ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।