শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের পায়ের ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে দিলেন চালক

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : হাসপাতালের শয্যায় অসহনীয় ব্যথায় কাতরাচ্ছেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ফাতেমা কাশেম ওরফে ওয়াফা (২৫)। নড়াচড়া করতে পারছেন না। বাসচাপায় তাঁর কোমর ও পায়ের হাড় কয়েক টুকরা হয়ে গেছে। ফাতেমা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বেসরকারি শমরিতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় বেপরোয়া গতির একটি বাস ফাতেমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পা পিষে দেয়। তাঁকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতালে) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

আজ দুপুরে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ট্রলিতে রেখে ফাতেমাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে রক্ত ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। তাঁর দুই পায়ে ব্যান্ডেজ ও নাকে অক্সিজেনের নল। কোমরে পরিয়ে দেওয়া হয়েছে বেল্ট।

পঙ্গু হাসপাতালে নাকে-মুখে অক্সিজেনের মাস্ক পরানোর আগে কাতর কণ্ঠে ফাতেমা বলেন, আজ সকাল নয়টার দিকে তাঁর মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে যেতে ফার্মগেটের আল-রাজি হাসপাতাল–সংলগ্ন সড়কের পাশে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলাইক পরিবহনের একটি বাস তাঁকে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তার পাশে ছিটকে পড়েন। এ সময় চালক তাঁর ডান পায়ের ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে দেন। পরে পথচারীরা তাঁকে ধরাধরি করে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান।

ফাতেমা বলেন, ‘এমবিবিএস পাস করে পাঁচ মাস আগে ইন্টার্নশিপ শুরু করি। সুস্থ হয়ে ইন্টার্নশিপ শেষ করতে পারব তো?’ তাঁর জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলার জন্য দায়ী বাসচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ফাতেমার কোমরের হাড় ভেঙে চার টুকরা হয়ে গেছে। তাঁর ডান ঊরুর হাড়ও ভেঙেছে। থেঁতলে গেছে দুই পা।

খবর পেয়ে ফাতেমার মা-বাবা পঙ্গু হাসপাতালে ছুটে আসেন। ফাতেমার বাবা আবুল কাশেম রাজধানীর গ্রিন রোডে সেন্ট্রাল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। মেয়ের অবস্থা দেখে তিনি কাঁদতে কাঁদতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসা থেকে মেয়েটা আমার সুস্থ অবস্থায় বের হলো। আর এখন শরীরের একি হাল হলো তার।’ তিনি বলেন, ফাতেমা বরাবরই মেধাবী। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

আবুল কাশেম বলেন, তিন মেয়ের মধ্যে ফাতেমা ছোট। তাঁর বড় দুই মেয়েও চিকিৎসক। তাঁদের বাসা রাজধানীর মিরপুরের দক্ষিণ পীরেরবাগের অমতলায়। মেয়ে মেডিকেল কলেজে বাসে যাতায়াত করতেন।

খবর পেয়ে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান ও পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার রুবাইয়াত জামান হাসপাতালে যান। তাঁরা ফাতেমার বাবাকে মামলা করার অনুরোধ করেন। তিনি রাজি হচ্ছিলেন না।

মেয়ের শয্যাপাশে বসে থাকা উদ্বিগ্ন মা জেবুন্নাহারও বলেন, মেয়ের যে ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। মামলা করে তো তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। মামলা করে আর কী হবে?

পরে তেজগাঁও থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফাতেমাকে চাপা দেওয়া বাসের চালকের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে তেজগাঁও থানায় মামলা করেছেন বাবা আবুল কাশেম।

তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান বিকেলে বলেন, দুর্ঘটনার পর জনতার সহায়তায় চালককে আটক ও এলাইক পরিবহনের বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তিনি আবুল কাশেমের মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

Share