শিবচরে বাস দুর্ঘটনায় ৩টি কারণের কথা বলল তদন্ত কমিটি

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের অফিস রুমে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন তদন্ত কমিটির প্রধান পল্লব কুমার হাজরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাদারীপুর শিবচরের কুতুবপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস উল্টে ১৯ জন নিহতের ঘটনায় মূল তিনটি কারণের কথা তুলে ধরেছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া ১৪টি সুপারিশও দিয়েছে তারা। আজ বুধবার দুপুরে মাদারীপুরের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের অফিস রুমে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তদন্ত কমিটির প্রধান পল্লব কুমার হাজরা।

এ সময় তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব কুমার হাজরা বলেন, ‘ইমাদ পরিবহনের বেপরোয়া গতি, বাসের ফিটনেস না থাকা ও মহাসড়ক পিচ্ছিল থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।’

‘শুরু থেকেই দ্রুতগতিতে চলছিল ইমাদ পরিবহন’‘শুরু থেকেই দ্রুতগতিতে চলছিল ইমাদ পরিবহন’
পল্লব কুমার হাজরা আরও বলেন, ‘বেপরোয়া গতির কারণে গেল বছরের ১৭ নভেম্বর ইমাদ পরিবহনের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করেন গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিস। শুধু তাই নয়, পরিবহনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় এ বছরের ১৮ জানুয়ারি। এরপরও মহাসড়কে চলছিল ইমাদ পরিবহন। যে কারণে ১৯ মার্চ সকাল ৮টায় মাদারীপুর শিবচরের কুতুবপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে ঘটে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। এ ছাড়াও দুর্ঘটনার দিন বৃষ্টিভেজা রাস্তা থাকার কারণে চালকের অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

পল্লব কুমার হাজরা বলেন, ‘সড়কে মৃত্যু কমাতে তদন্ত প্রতিবেদনে ১৪টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে—চালক ও সংশ্লিষ্ট সকলের লাইসেন্স এবং একটি গাড়ির সকল বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করে মহাসড়কে গাড়ি চালানো নিশ্চিত করতে হবে, এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়ির চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট পরিধান করতে হবে, এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে গার্ড রেল স্থাপন করতে হবে, এই রাস্তায় কমপক্ষে তিন লেন ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এ ছাড়া মহাসড়কে চলাচলকারী সব পরিবহনের হালনাগাদ তথ্যসংবলিত ডেটাবেইস রাখতে হবে।’

তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য ও মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ে চলাচলকারী গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য লোকবল ও টহল গাড়ি আধুনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করতে হবে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ করে রাতে, ভোরে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় গাড়ির গতি অপেক্ষাকৃত কম রাখতে হবে। দুর্ঘটনা কমাতে সড়ক ও মহাসড়কের সিসি টিভি, ট্র্যাকার, অনলাইন মনিটরিং জোরদার করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিবচর হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট জয়ন্ত সরকার শিবচর থানায় ইমাদ পরিবহন কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে একটি মামলা করেন। এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হলেও মামলার তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে। খুব শিগগিরই মামলাটি আলোর মুখ দেখবে। এ ছাড়া এই দুর্ঘটনায় চালক ও হেলপার মারা যাওয়ায় আইনিপ্রক্রিয়া একটু বিলম্ব হচ্ছে।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। ঘটনার কারণ ও সুপারিশ করা ১৪টি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠান হবে। ভবিষ্যতে বিভিন্ন দপ্তরের সহযোগিতায় দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত রোববার (১৯ মার্চ) সকালে খুলনা থেকে রাজধানী ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস মাদারীপুর শিবচরের কুতুরপুরের এক্সপ্রেসওয়েতে আসলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে ১৯ জন যাত্রী নিহত হন। এই ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব কুমার হাজরাকে প্রধান করে চার সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক।

Share