সংসদে বেনজীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনা

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। কারা কারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, বাড়ি করেছেন, পানামা পেপারসে কাদের নাম এসেছে, সেসব সংসদে প্রকাশ করারও দাবি জানানো হয়েছে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনজন সংসদ সদস্য এসব দাবি জানান। তবে জাতীয় সংসদে দুর্নীতি নিয়ে এ অনির্ধারিত আলোচনার মাঝপথে বাধা দেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর–ই–আলম চৌধুরী।

মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি নিয়ে বক্তব্যের সূত্রপাত করেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকীও বক্তব্য দেন।

এরপর বক্তব্য দিতে দাঁড়ান সরকারি দলের সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত নারী আসন) তারানা হালিম। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তারানা হালিমকে থামিয়ে ফ্লোর নেন চিফ হুইপ নূর–ই–আলম চৌধুরী। তিনি স্পিকারের কাছে জানতে চান, কোন বিধিতে, কিসের ভিত্তিতে সংসদে এ আলোচনা হচ্ছে, এভাবে আলোচনা হতে পারে কি না। এ সময় স্পিকারের আসনে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক। চিফ হুইপের বক্তব্যের পর অনির্ধারিত আলোচনা বন্ধ করে দেন তিনি।

অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আরও যাঁরা বেনজীর আছেন, তাঁরা আস্কারা পাবেন।

বেনজীর আহমেদের অনিয়ম–দুর্নীতি নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সম্পাদকীয় পড়ে শোনান মুজিবুল হক। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেনজীরের সম্পদ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যও তিনি তুলে ধরেন।

মুজিবুল হক বলেন, বেনজীর যখন র‌্যাবের ডিজি ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার ছিলেন, তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেককে ভয় দেখিয়ে জমি কিনেছেন। তিনি কয়েক দিন আগে ৮০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে বিদেশে চলে গেলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বেনজীর আহমেদ বিদেশে চলে গেছেন কি না, তিনি জানেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানবেন না কেন—এই প্রশ্ন রেখে মুজিবুল হক বলেন, সারা দেশে আলোচিত এই ব্যক্তি ইমিগ্রেশন পার হয়েছেন। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তা সরকারকে জানায়নি, তাহলে সব কর্মচারীকে বরখাস্ত করা উচিত।

মুজিবুল হক বলেন, বিরোধী দলের কোনো নেতা চিকিৎসার জন্য গেলে তাঁদের দুই ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। আর এ রকম একজন ব্যক্তি বিদেশে চলে যাবেন, সরকার জানবে না, তা হতে পারে না। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এত বাহিনী, এত এজেন্সি তারা কী খবর রাখে?

মুজিবুল হক আরও বলেন, সরকারের দায় নেই বললে মানুষ তা মানবে না। কারণ, এই সরকারের আমলে বেনজীর আহমেদের পদোন্নতি, পোস্টিং হয়েছে। এই সরকারের আমলে দুর্নীতি করে তিনি এসব সম্পদ গড়েছেন। তাঁর দুর্নীতিতে প্রমাণিত হয়েছে, সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, বেনজীর, আজিজ, আনোয়ারুল আজীমের ঘটনায় তিনি নিজে নির্বিকার। লাখ লাখ আজিজ, বেনজীর সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে।

লতিফ সিদ্দিকীর পর বক্তব্য দিতে দাঁড়ান সরকারি দলের সদস্য তারানা হালিম। তিনি বলেন, ‘যাঁর (বেনজীর) কথা বলা হলো এতক্ষণ, তাঁর মন খারাপ হলে ১০টা বাড়ি কিনতেন। আমাদের মন খারাপ হলে আমরা বড়জোর দু–একটা শাড়ি কিনতে পারি। ওনার মন খারাপ হলে অনেক বড় বড় কিছু কিনতে পারেন।’

বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হয়ে থাকলে ঘুষ খাওয়ার সময় বুক চুরমার হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তারানা হালিম বলেন, ‘যানবাহনে সিন্ডিকেট, রাস্তাঘাটে সিন্ডিকেট, বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ওমুক খানে সিন্ডিকেট, চালের গুদামে সিন্ডিকেট, বস্ত্র বিতরণে সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট কারা? আমরা জানতে চাই, নাম প্রকাশ করা হোক। কাদের পানামা পেপারসে, পেরাডাইস পেপারে নাম আছে, আমরা জানতে চাই।’

কানাডায় বেগম পাড়ায় কার কার বাড়ি আছে, কে কে টাকা পাচার করেছে—সবার নাম সংসদে প্রকাশ করার দাবি জানান তারানা হালিম।

তারানা হালিমের বক্তব্যের মাঝপথে ফ্লোর চান চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। তারানা হালিমের মাইক বন্ধ করে এ সময় চিফ হুইপকে ফ্লোর দেন ডেপুটি স্পিকার। তখন চিফ হুইপ বলেন, ‘আলোচনাটা কিসের ওপর হচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি না। আপনি কিসের ওপর আলোচনা…এটা কি সাধারণ আলোচনা, এটা কি বাজেট অধিবেশন আলোচনা? পয়েন্ট অব অর্ডার হলে এটা কিসের ওপর পয়েন্ট অব অর্ডার, সেটা থাকতে হবে, সেটার সময় থাকবে।’

ডেপুটি স্পিকারের উদ্দেশে নূর–ই–আলম চৌধুরী বলেন, ‘আপনি পয়েন্ট অব অর্ডারে যদি একজনকে আধা ঘণ্টা সময় দেন, তাহলে তো সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি, নীতিমালা কোনোটাই মানা হচ্ছে না। পয়েন্ট অব অর্ডারে অবশ্যই বলতে হবে কী পয়েন্টের ওপর, সেটা সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। আপনি তো (ডেপুটি স্পিকার) সাধারণ আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। এখানে অনেক এমপি বসে আছেন, তাঁদের মূল্যবান সময় আছে; কিন্তু আপনি তো পয়েন্ট অব অর্ডারে সাধারণ আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন।’

পরে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেন, ‘চিফ হুইপ সঠিক কথা বলেছেন। পয়েন্ট অব অর্ডারে আমাদের আইন আছে, কার্যপ্রণালি বিধি আছে। অভিজ্ঞ সদস্য আছেন, তাঁদের সেই অনুযায়ী কথা বলার দরকার।’ পয়েন্ট অব অর্ডারে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর এমপিদের কথা বলার অনুরোধ করেন তিনি। পরে এ বিষয়ে আর আলোচনা হয়নি।

Share