নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : ত্রাণের যে পরিমাণ প্রচার চালানো হচ্ছে তার চেয়ে প্রাপ্তি কম বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে কর্মহীন ও হতদরিদ্র পরিবারগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে। ফলে সন্তানদের খাবার দিতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এক মা।
ঘটনাটি কক্সবাজারের। করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে এ জেলাকে লকডাউন করা হয়। ফলে কর্মক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমজীবী, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত এবং ছিন্নমূল পরিবারগুলো অনটনে কাহিল হতে থাকেন।
কিন্তু সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে জনগণকে রক্ষায় কর্মহীন ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে সনাক্ত করে নিত্য প্রয়োজনীয় আহার সংস্থানে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই জেলা-উপজেলা প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা শুরু করেন ত্রাণ তৎপরতা।
গত ২০ দিনে (১২ এপ্রিল পর্যন্ত) কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জেলায় ৩৪ হাজার পরিবারের কাছে ৪৯০ মেট্রিক টন খাদ্য ও ৬ হাজার ৬’শ পরিবারকে নগদ ১৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
অন্যভাবে, জেলা আওয়ামী লীগ, নানা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠন ও করোনা সহায়তা তহবিল করে আরো কয়েক হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রচার পেয়েছে। কিন্তু এসব প্রচারণার চেয়ে হতদরিদ্র পরিবারগুলোতে ত্রাণ প্রাপ্তির পরিমাণ কম বলে মন্তব্য করেছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের পক্ষে দেওয়া ত্রাণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকদের করা তালিকায় চরম স্বজনপ্রীতির কারণে জেলার অনেক দরিদ্র পরিবার ত্রাণ সহায়তা না পেয়ে নীরবে গুমরে মরছে।
তেমনি এক শ্রমজীবী পরিবারের কর্ত্রী সন্তানদের খাবার দিতে ব্যর্থ হয়ে ক্ষোভে-অভিমানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।
রবিবার দুপুরে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ কুতুবদিয়াপাড়ার ফার্ম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় কাউন্সিলর ত্রাণের তালিকায় নিজ স্বজনদের স্থান দিতে গিয়ে মূল শ্রমজীবী কর্মহীনদের তালিকার বাইরে রাখায় এমনটি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
সমাজ সর্দার নুরুল হক জানায়, বাড়িতে খাবার নাই। করোনার কারণে বাইরে কাজে যেতে পারেনি শ্রমজীবী মো.জসিম। অভাবের কারণে সন্তানদের খাবার যোগাড় করতে না পেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় মো. জসিমের স্ত্রী ৫ সন্তানের জননী কুলসুমা আক্তার (৩৫)।
ঘরের চালার গাছের সঙ্গে মায়ের ফাঁস লাগানোর বিষয়টি তার এক ছেলে দেখে চিৎকার দিলে পাশের বাড়ির লোকজনসহ অন্যরা এসে দরজা ভেঙ্গে আহত কুলসুমাকে উদ্ধার করে। খবর পেয়ে ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আতিক উল্লাহ কোম্পানি ঘটনাস্থলে গিয়ে নিজস্ব তহবিল থেকে সপ্তাহ চলার মতো খাবার কিনে দেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে স্থানীয় কাউন্সিলর এসআই আকতার কামালের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হয়। রিং হলেও ফোন ধরেননি তিনি। ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হলেও উত্তর আসেনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আফসার বলেন, সোমবার ঘটনাটি জানার পর সদরের ইউএনও এবং স্থানীয় কাউন্সিলরকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। এখনো ফিডব্যাক আসেনি।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, আমরা নিম্ন, মধ্য বা উচ্চবিত্ত হিসেবে এখন কাউকে দেখছি না। করোনা দুর্যোগে হিসাব করা হচ্ছে কর্মহীন পরিবার। ইতোমধ্যে জরুরী খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা পেয়েছে ৪০ হাজার পরিবার। খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় জেলায় ১০ টাকার চাউল সহায়তা পাচ্ছেন ৭৭ হাজার ১১৯ কার্ডধারী দরিদ্র পরিবার।
তিনি আরো জানান, ভিজিডি সহায়তা পাচ্ছেন ৫৫ হাজার দুঃস্থ। তবে, কি পরিমাণ পরিবার এখনো খাদ্য সহায়তার বাইরে রয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই। বাকি কর্মহীন রয়েছে কারা, ৮ উপজেলায় সেই তালিকা করা হচ্ছে। করোনার সংকটকালীন সময়ে জরুরি খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে মজুদ রয়েছে আরো ৫৭৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং শিশু খাদ্য নিরাপত্তায় ৬ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।
সন্তানদের খাবার দিতে ব্যর্থ হয়ে এক গৃহবধূর আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, গত এক দশকে দেশে দারিদ্রতার হার কমেছে। মানুষ এখন খাবার না পেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্নভাবে অন্যরাও ত্রাণ দিয়েছে। সেখানে এমনটি হওয়ার কথা নয়। এরপরও এমন সব তথ্য পেলে প্রশাসন তড়িত গতিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান ডিসি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, কক্সবাজারে ঘোষণা কৃত লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে কঠোরভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী।