
বিশেষ প্রতিবেদক : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে প্রথম ইনিংস বা প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। গতকাল রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো। গতকাল শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন। সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান উপদেষ্টা গতকাল প্রথম সংলাপে গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ সার্থক করতে ও তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই মিলে সবরকম চেষ্টা করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, প্রতিজ্ঞা করি আমরা যেন গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান না জানাই। যে কারণে তারা আত্মত্যাগ করেছিল সেটা যেন পরবর্তী সব প্রজন্ম মনে রাখে, তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে, তাদের আত্মত্যাগকে সার্থক করার জন্য আমরা সবাই মিলে সবরকম চেষ্টা করবো, তাদের সে স্বপ্ন যেন বাস্তবায়ন করতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, তারা এ ত্যাগ না করলে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকলেও জবাব খোঁজার আমাদের কোনো সুযোগ থাকতো না। প্রশ্ন আমাদের মনে যতটুকু ছিল, বহু বছর ধরে ছিল, সুযোগ পাইনি। অসংখ্য ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সে সুযোগ পেয়েছি।অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক ২৬টি দল ও জোটের প্রায় ১০০ রাজনৈতিক বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। গতকাল বেলা তিনটার পরপর ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ প্রতিনিধিরা। বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ছাড়াও বৈঠকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে যোগ দেন।
এছাড়া, ১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, সমন্বয়ক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এহসানুল হুদা, মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামা ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন একরাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অ্যাড. নুরুল আমিন বেপারী, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামিক ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুর রকিব, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান মাস্টার এম এ মান্নান, পিএনপির চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ লিটন প্রমুখ অংশ নিয়েছেন।
জাতীয় নাগরিক কমিট, এলডিপি, এবি পার্টি, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস, ডেমোক্রেটিক লেফট ইউনিটি, লেবার পার্টি, বাংলাদেশের জাসদ, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, গণফোরাম, আমজনতার দল, লেফট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব দল থেকেও নেতৃবৃন্দ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যমত কমিশনের এটিই প্রথম সভা। পরর্বর্তীতে এরকম আরও সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন বিভাগভিত্তিক সংস্কার কমিশনের পাশাপাশি সংস্কার বাস্তবায়নে সব রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকার ঐকমত্য কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ইউনূস নিজেই। অন্য কমিশনের প্রধানেরা এই কমিশনের সদস্য।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং পদক্ষেপ সুপারিশ করবে এই কমিশন। কমিশনের মেয়াদ কার্যক্রম শুরুর তারিখ থেকে ছয় মাস।