নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : ভুয়া লাইসেন্সে অস্ত্র ক্রয় করার ঘটনায় দায়ের করা অস্ত্র আইনের মামলার আসামি ৬০ জনের জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করেছে আদালত। রংপুরের ডিসি অফিসের অফিস সহকারী সামসুলের মাধ্যমে ভুয়া অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছিলেন তারা। তাদের আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা এ আদেশ প্রদান করেন।
আটককৃতরা হলেন, আনোয়ারুল হক, আমিরুল ইসলাম (আম্বিয়া),পীন্টু চন্দ্র শীল, মহিউদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, আলাউদ্দিন, আলম মিয়া, আয়াত উল্লাহ্, এ.কে.এম আইনুর রহমান, মোবারক আলী খন্দকার, শাহিন শিকদার, আবুল বাশার তালুকদার, ওমর ফারুখ চৌধুরী, আবু সাইদ বিশ্বাস, আব্দুর রশিদ মিয়া, শহিদুল ইসলাম কান্দু, মোঃ মোস্তফা, মামুনুর রশিদ, সালেহ আহমেদ, হাবিবুর রহমান, জাহাঙ্গীর হোসেন, আজিম উদ্দিন, লেঃ মোঃ কাছেদ আলী, জুয়েল রহমান, আবু জাহান, জাহাঙ্গীর আলম, কামরুল ইসলাম, আবু সাঈম, মেজবা উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল কাফী, সাইদুর রহমান, আব্দুল মোমিন, বেলাল হোসেন, সহিদুল ইসলাম, শাহজাহান আলী, মাহাবুবুর রহমান, মোঃ ইসমাইল, রতন মাহমুদ, আব্দুল বাছির, মাহাবুব আলম, রফিকুল হাসান (অবসরপ্রাপ্ত সেনা সৈনিক), আব্দুল হাকিম, জুলহাস আলম, আবুল হাসান, আবু নোমান, হাফিজুর রহমান, নাজির হোসেন, আকরাম আলী শেখ, লেঃ মোঃ হারুন অর রশিদ মিয়া, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল বারী, আব্দুল হান্নান, আব্দুল মতিন, শফিকুল ইসলাম, ইউসুফ আলী, আব্দস শহিদ ওরফে গোদন, রফিকুল ইসলাম, মোঃ শাহিন ও মোঃ মহিউদ্দিন।
রংপুরের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট শাহ মোঃ নয়ন নুর রহমান টফি জামিন না মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রংপুর জজ আদালতের পিপি আব্দুল মালেক জানান, স্বস্ব আইনজীবীর মাধ্যমে দুপুরে চা ল্যকর এই অস্ত্র মামলায় রংপুর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। আসামিরা দেশের বিভিন্ন এলাকার ৬০ ব্যক্তি। যারা অর্থের বিনিময়ে রংপুরের জেলা প্রশাসকের ভূয়া স্বাক্ষর করা অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছিলেন।
বিকেল চারটায় রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রাশেদা সুলতানা শুনানী শেষে তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আটককৃতরা হাইকোর্ট থেকে অন্তবর্তিকালীন জামিনে ছিলেন। রংপুরের আদালতে জামিন না মঞ্জুর হওয়াদের সবাই সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সামরিক আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন পদের অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে রংপুরের ডিসি অফিসের অফিস সহকারী সামসুল আলম জ্বালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া অস্ত্রের লাইসেন্স তৈরি করে দেওয়ার নামে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ভুয়া লাইসেন্স গ্রহণকারীরা জন প্রতি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা দিয়ে এসব ভুয়া অস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণ করে অস্ত্র ক্রয় করে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় অফিস সহকারী সামসুল আলমকে পুলিশ গ্রেফতার করলে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করে।
এ ঘটনায় রংপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বস পৃথক দুটি ও কোতয়ালী থানার এস.আই মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলায় আড়াইশ ব্যাক্তিকে আসামি করে আদালতে চার্জসীট দাখিল করে কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) মোখতারুল আলম। আসামিদের কয়েকজন সাবেক সেনা সদস্য। এদের মধ্যে ৬০জন আসামি বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক শুনানী শেষে সকল আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ প্রদান করেন। আদালতের হাজত খানা থেকে কঠোর পুলিশী নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ৬০জনকে রংপুর কেন্দ্রিয় কারাগারে পাঠানো হয়।
২০০৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সামসুল ও তার সিন্ডিকেট রংপুর ডিসিদের সই জাল করে ব্যাক ডেটে ৪০০ বেশী আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেন। এর মাধ্যমে তিনি কয়েক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে। ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ায় গত ১৮ মে তার অফিসে অভিযান চালিয়ে সামসুলের আলমিরা থেকে ১৫টি ভূয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স, ১৫ টি ভূয়া লাইসেন্সের ভলিউম, ৭ লাখ নগদ টাকা, ১১ লাখ টাকার এফডিআর ও ২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় ডিসি অফিস ও দুদক দুটি মামলা করে।