বিশেষ প্রতিবেদক: দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বিলুপ্তির পর রাষ্ট্রপতি মতামত চাওয়ার প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পক্ষেই সায় দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল শুনানিতে এই মতামত দেয় বলে একজন বেঞ্চ অফিসার জানান।
শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো, সাহাবুদ্দিন। এ অবস্থায় অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায় কি না, সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি।
আপিল বিভাগের একজন বেঞ্চ অফিসার বলেন, “বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
“আপিল বিভাগ সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মতামত দিয়ে বলেছেন, সংসদ না থাকা অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ও কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে।”
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আপিল বিভাগের এই মতামত পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের শপথবাক্য পাঠ করান বলে এই কর্মকর্তা জানান।
সবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, যাহা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।”
বাংলাদেশের সংবিধানে আগে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা থাকলেও অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথ বন্ধ করতে ২০১১ সালে ওই ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে আওয়ামী লীগ সরকার।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতের পালিয়ে গেলে তৈরি হয় সাংবিধানিক সংকট। নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনে ১৩ বছর পর আবার অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ব্যবস্থার ডাক পড়ে।
রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়ে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চান। আপিল বিভাগও তাতে সায় দেয়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেয়।
গণঅভ্যুত্থানে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ সরকারের পতনের পর পঞ্চম সংসদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য তিন মাসের অন্তর্র্বতীকালীন একটি সরকার গঠন করা হয়, সেটা ছিল বাংলাদেশের প্রথম অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। সে সময়ও এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া হয়েছিল।