গাজী আবু বকর : কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট গুলশান-২ সার্কেলের আলোচিত নন্ টেকার রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) মোঃ আরিফুর রহমানকে কমিশনারেটের প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর নয়বার্তার অন লাইন সংস্করণে “আমি নন্ টেকার অফিসার” শিরনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।এই প্রতিবেদন প্রচারিত হবার পর কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট উত্তর কমিশনারেটের একজন উর্ধতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান যে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পাঠকদের জন্য আলোচিত প্রতিবেদনটি প্রিন্ট সংষ্করনে সংযুক্ত করা হলো:-
আমি নন্ টেকার অফিসার।আমার কমিশনার মহোদ্বয়ও একথা জানেন।গত অর্থ বছরে ৫১৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের বিপরীতে ৫৮৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছি। চলতি অর্থ বছরে আমার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৬৩৪ কোটি টাকা। অক্টোবর পর্যন্ত ৪০ কোটি টাকা আদায় করেছি।এই প্রতিবেদকের নিকট কথাগুলো বলছিলেন কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট গুলশান-২ সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) মোঃ আরিফুর রহমান।ঠিক তার এই কথার মাঝে তার কক্ষে প্রবেশ করলেন নাভানা সিএজির ভ্যাট প্রতিনিধি।রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ আরিফুর রহমান তার পরিচয় জেনে ড্রয়ার টেনে কয়েকটি পাতার একটি তালিকা বের করলেন।নাভানা সিএজির ভ্যাট প্রতিনিধি আরও আরিফুর রহমানের ড্রয়ারে একটি মোটা সাদা খাম রাখলেন।আরও আরিফুর রহমান তালিকায় নাভানা সিএজি কোম্পানির নামের পাশে টিক চিহ্ন দিলেন। নাভানা সিএজির ভ্যাট প্রতিনিধি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। ঘটনাটি গত ১৫ ডিসেম্বর ১১টায়।
নাভানা সিএজির ভ্যাট প্রতিনিধি বের হয়ে গেলে এই প্রতিবেদক খামের মধ্যে নাভানা সিএজির ভ্যাট প্রতিনিধি কি দিয়েছেন তা আরও আরিফুর রহমানের নিকট জানতে চান।তখন তিনি ইতস্থ করতে থাকেন।বলেন, অফিস পরিচালনায় বরাদ্ধ বহির্ভূত অনেক খরচ রয়েছে।এনবিআর, বিভাগীয় কর্মকর্তারর দপ্তর ও কমিশনারেটের কর্মকর্তাদের দিতে হয়।সার্কেলের অনুমোদনহীন কর্মচারিদের বেতন দিতে হয়।আমাকে ভ্যাট প্রদানকারী কোম্পানির নিকট থেকে ভ্যাটের বাইরে কিছু টাকা নিয়ে সেই খরচ মেটাতে হয়।
আরও’র রুমের বাইরে এসে দেখা গেলো প্রত্যেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার টেবিলে ভ্যাট রিটার্ণ জমা দেবার জন্য সেবা গ্রহণকারীরা লাইনন ধরে আছেন।সবাই রিটার্ন এর চালান জমা দিয়ে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার হাতে একটি করে মোটা খাম ধরিয়ে দিচ্ছেন।
মূলতঃ কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট গুলশান-২ সার্কেলে ভ্যাট আদায়ে ব্যাপক হারে ঘুষ আদায় করা হয়, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদক গত ২৮ অক্টোবর “তথ্য অধিকার (তথ্য প্রাপ্তি সংক্রান্ত) বিধিমালা, ২০০৯ এর ৮ ধারা অনুযায়ী” কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট গুলশান-২ সার্কেলের আরও’র নিকট তথ্য চেয়ে একটি আবেদন করেন। আবেদনের প্রশ্নগুলো ছিলো নিন্ম রুপঃ-
প্রশ্ন :- কাস্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট, গুলশান সার্কেল-২ এর চলতি অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা কত? গত জুলাই-২০২১ হইতে অক্টোবর ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আদায়কৃত ভ্যাটের পরিমান কত?
প্রশ্ন :- আলোচিত সময়ে ভ্যাট ফাঁকির কোন ঘটণা ঘটিয়াছে কি? ঘটিলে কোন মামলা হইয়াছে কি? মামলা হইলে কতগুলো মামলা হইয়াছে? মামলার বিপরীতে কত টাকার ভ্যাট আদায় হইয়াছে।
প্রশ্ন :- কাস্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট, গুলশান সার্কেল-২ এর পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান, ঠিকাদার, আমদানীকারক প্রতিষ্ঠন, রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান, এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কত?
প্রশ্ন :- কাস্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট, গুলশান সার্কেল-২ এ কতটি হোটেল/ রেস্টুরেন্ট ও মিস্টির দোকান রহিয়াছে। এইসব দোকান সমুহ প্রতিমাসে কত টাকার ভ্যাট দেয়।
প্রশ্ন :- কাস্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট, গুলশান সার্কেল-২ এ কতটি সুপারমল রহিয়াছে। এইসব সুপারমলে দোকান সংখ্যা কত?
প্রশ্ন :- কাস্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট, গুলশান সার্কেল-২ এ কতটি প্যাকেজিং কোম্পানী রহিয়াছে।
প্রশ্ন :- কাস্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট, গুলশান সার্কেল-২ এ কতটি দোকানে ইএফডি মেশিন চালু হইয়াছে। এইসব দোকান হইতে প্রতিমাসে কত টাকার ভ্যাট আদায় হইতেছে।
প্রশ্ন :- কাস্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট, গুলশান সার্কেল-২ এ গত জুলাই-২০২১ হইতে অক্টোবর ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে কতগুলো প্রিভেন্টিভ কার্যক্রম পরিচালিত হইয়াছে? এইসব কার্যক্রম হইতে কি পরিমাণ রাজস্ব আদায় হইয়াছে।
দীর্ঘ দিনেও এই প্রতিবেদক আবেদনকৃত তথ্য সমুহ না পাওয়ায় গত ১৫ ডিসেম্বর কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট গুলশান-২ সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) মোঃ আরিফুর রহমান এর সাথে সাক্ষাৎকোলে উপরের দৃশ্যাবলী নিজ চোখে দেখেন।পরবর্তীতে নাভানা সিএজির ভ্যাট প্রতিনিধিকে খুজে বের করে তার নিকট ১৫ ডিসেম্বরের ঘটনার বিষযে জানতে চাইলে তিনি কোন প্রকার মন্তব্য করতে প্রথমে অস্বীকার করেন।পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতি মাসে আরওকে ২০ হাজার এবং এআরওদের ২৫ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়।একই ধরনের অভিযোগ করেছেন, র্যাংগস ফার্মাসিউটিক্যাল, নাভানা লিমিটেড, হুয়ান বলিন ক্লাব, হোটেল ঘরোয়া, আরপি ফাস্ট ফুড প্রভৃতি ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান।