নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : করোনার নমুনা সংগ্রহে বৈধ অনুমতি নেই তাদের। নেই স্যাম্পল পরীক্ষার ল্যাবও। বাসায় সম্বল একটি কম্পিউটার। স্বামী-স্ত্রী মিলে অনলাইনে দুটি সাইট খুলে প্রথমে করোনার উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের টার্গেট করেন তারা। এরপর তাদের বাড়িতে গিয়ে নমুনাও সংগ্রহ করতেন। পরে কোথাও ফেলে দিতেন নমুনা। এরপর বাসায় বসে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আদলে হুবহু করোনার সার্টিফিকেট তৈরি করে ইচ্ছামতো ‘পজিটিভ-নেগেটিভ’ বানিয়ে তা রোগীর ই-মেইলে পাঠাতেন। মনগড়া এই করোনার রিপোর্ট তৈরিতে জনপ্রতি পাঁচ-আট হাজার টাকা নিতেন।
করোনা নিয়ে ভয়ংকর এ প্রতারণায় জড়িত দম্পতি হলেন হুমায়ুন কবির ও তানজিনা পাটোয়ারী। এরই মধ্যে অন্তত ৪২ জনকে করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট দেওয়ার তথ্য তাদের ই-মেইল যাচাই করে পাওয়া গেছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন-অর রশিদ সমকালকে জানান, সম্প্রতি একজন ভুক্তভোগী তার করোনার সার্টিফিকেট ও সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আচরণে সংশয় প্রকাশ করেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুলিশকে অনুরোধ করেন তিনি। এরপরই তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে যা বেরিয়ে আসে তা কল্পনাকেও হার মানায়। করোনার সনদ নিয়ে এমন প্রতারণা সত্যি অবিশ্বাস্য। অনলাইনে দুটি সাইট খুলে সেখানে হটলাইন নম্বর দিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করেন তারা। এরপর তাদের স্যাম্পল আনতে যেতেন। প্রতারণা করে আসছিলেন এক দম্পতিসহ আরও কয়েকজন। তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মাহমুদ খান জানান, তানজিনা পাটোয়ারী পেশায় একজন নার্স। তার স্বামী হুমায়ুন কবির গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তারা এক সময় জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা প্রজেক্টে চাকরি করতেন। সরকারি সংস্থার অনুমতি নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে শুরুতে তারা করোনার নমুনা পরীক্ষা করে বৈধ ল্যাবে পাঠাতেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল স্যাম্পল কালেকশনের বুথ তৈরি করা। পরবর্তীকালে স্বামী-স্ত্রীর মাথায় কুমতলব আসে। ১২ এপ্রিল তারা ওই প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে নিজেরা অনলাইনে ‘বুকিং বিডি’ ও ‘হেলথ কেয়ার’ নামে দুটি সাইট খোলেন। এরপর ওই সাইট থেকে অনেককে প্রলুব্ধ করে নমুনা সংগ্রহ করে থাকেন।
পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে আশকোনার বাসায় অভিযান চালিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। তাদের বাসায় আটটি পিপিই, নমুনা সংগ্রহের ৫০টি স্টিক ও অনেক হ্যান্ড গ্লাভস পাওয়া যায়। একটি কম্পিউটারও জব্দ করা হয়। সেখানে ৪২ জনকে ভুয়া করোনার রিপোর্ট দেওয়ার তথ্য মিলেছে। সর্বশেষ সোমবারও পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন স্বামী-স্ত্রী।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, মূলত অর্থের লোভেই তারা এ ধরনের প্রতারণায় জড়িয়েছেন। যে জোবেদা খাতুন স্বাস্থ্য সেবা প্রজেক্টে চাকরি করতেন তা ওভাল গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন। ওই প্রতিষ্ঠানের অনেকেই করোনার সার্টিফিকেট নিয়ে এ ধরনের বাণিজ্য করছেন। সেখান থেকেই তারা এই অপরাধে জড়াতে উদ্বুদ্ধ হন। এরপরই গতকাল গুলশান-২ নম্বরে জেকেজি নামে ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তার কর্ণধারসহ আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থেকে দুটি ডেস্কটপ, চারটি ল্যাপটপ ও তিন হাজার পিস স্যাম্পল কালেকশন স্টিক জব্দ করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতারক এই চক্রটি মূলত মহাখালীর ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়িটিভের সার্টিফিকেটের কপি নকল করে করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরি করত।