স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই ।। বাড়ছে সংক্রমণ

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : দেশে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন করোনা পূর্বাভাস বিষয়ক গবেষক দলের সদস্যরা। চলতি বছরের মে মাসে করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে তাদের ধারণা। মে মাসে প্রতিদিন আন-রিপোর্টেড ১৫ হাজারের মতো মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। রিপোর্টেড আক্রান্তের সংখ্যা আরো কম হতে পারে। আর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা আসলে জুন মাসের শেষ পর্যন্ত সর্বমোট ২০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। করোনা নিয়ে মডেলিং, মানুষের আচার-আচরণ, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, ভ্যাকসিন নিতে অনাগ্রহ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে এই পূর্বাভাস তৈরি করেছে গবেষক দল। গবেষকরা বলেছেন, ভ্যাকসিনেশন প্রয়োগ খুব সিনসিয়ারলি নিতে হবে। কারণ গত এক সপ্তাহ ধরে রেজিস্ট্রেশন ও ভ্যাকসিন নেয়ার আগ্রহটা কমে গেছে।আগে প্রতিদিন দুই লাখ মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছে। এখন সেটা এক লাখে পৌঁছে গেছে।

গবেষক দলের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. শাফিউন শিমুল বলেন, অনেক দেশেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ হয়েছে। বাংলাদেশেও দ্বিতীয় ঢেউ হওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে রয়ে গেছে। তবে এটা যে হবেই বিষয়টা এমন নয়। আমরা যদি সচেতন থাকি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি আর সোশ্যাল গেদারিং না বাড়াই তবে এটাকে আটকানো সম্ভব। করোনা নাই, দেশ থেকে চলে গেছে, এরকম মানসিকতা থেকে সারা দেশে স্বাস্থ্যবিধি না মানার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এখানে একটা কড়া বার্তা দিতে হবে। করোনা চলে যায়নি। দেশে এখনো করোনা আছে। তিনি বলেন, আমাদের আগের গবেষণায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটো বাড়ার কথা বলেছিলাম। তখন যে সময়সীমার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল তারমধ্যে না হলেও এখন সংক্রমণ বাড়ছে। মে মাসে এটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। পরীক্ষা বাড়ালে ওই সময় দিনে গড়ে ১৫ হাজার কেইস পাওয়া যাবে। এভাবে চলতে থাকলে জুন মাসের শেষ পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তাই স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংক্রমণ নাই বা কম সংক্রমিত এলাকায় কিছু স্কুল খুলে পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে অন্য এলাকায় খোলা যেতে পারে। সর্বোপরি ভ্যাকসিনের প্রতি জোর দিতে হবে। সংক্রমণ বাড়ছে এটা ধরে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থাতে জোর দিতে হবে। মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।

এদিকে, দেশে গত কয়েকদিন ধরে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী। কিছুদিন আগে শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচে নেমেছিল। কিন্তু শনাক্ত বেড়ে গতকাল পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশে। মৃত্যুর হার কয়েকদিন ঊর্ধ্বমুখী হলেও গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন। শনাক্ত বাড়ায় ঢাকার সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের চাপ বাড়ছে। জটিল রোগীদের জন্য কিছু কিছু হাসপাতালে আইসিইউ ও কেবিন মিলছে না। দীর্ঘদিন খালি থাকার পর সাধারণ করোনা শয্যায়ও রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। দেশে হঠাৎ করে শনাক্তের হার বেড়ে যাওয়াতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শীতে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার অনেকটা কমেছিল। এ ছাড়া দেশে টিকার প্রয়োগও শুরু হয়েছিল। এতে করে কিছু মানুষ অসচেতন হয়ে পড়েছে। মাস্ক পরার তো বালাই নেই। উল্টো স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যত্রতত্র ঘুরাফেরা করছে। বাজার-হাট থেকে শুরু করে মার্কেট এবং গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক ছাড়া মানুষ অবাধে চলাফেরা করছে। এতে করে ব্যাপকভাবে সংক্রমণের বিস্তার হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশের বাইরে থেকে ভাইরাসের নতুন কোনো ধরন দেশে প্রবেশ করেছে কিনা সেটা অনুসন্ধান করা দরকার। এটি হতে পারে ইউকে, সাউথ আফ্রিকা বা অন্য কোনো দেশের ভাইরাসের ধরন। তাই দেশে নতুন যে রোগীরা শনাক্ত হচ্ছে তাদের থেকে নমুনা নিয়ে করোনাভাইরাসের জিন বিন্যাস পরীক্ষা করা দরকার। একই সঙ্গে দেশের ভেতরে ভাইরাসের নতুন কোনো ধরন আছে কিনা সেটিও দেখা দরকার। এসব বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা না হলে ভবিষ্যতের জন্য আমাদের আরো বড় বিপদ হতে পারে। তিনি বলেন, শনাক্তের হার কমে যাওয়াতে মানুষের মধ্যে একটা স্বস্তির ভাব এসেছিল। ১৫/২০ দিন আগেও ঢাকার রাস্তায় যেসব মানুষকে মাস্ক পরতে দেখা গেছে এখন আর সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। মাস্ক ছাড়াই মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। এটা একটা ভয়ের কারণ। টিকা নিলেই হবে না। টিকা নেয়ার পরও মাস্ক পরতে হবে।

Share