নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : রাজধানীর দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ও অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিল। নগরবাসী কাছে জনপ্রিয় এ ঝিলের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য এখন অনেকটা বিলীন হওয়ার পথে। নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে দিন দিন নষ্ট হচ্ছে এখানকার পরিবেশ। লেকের পাড়ে পড়ে আছে ময়লার স্তূপ। পচে নষ্ট হয়ে গেছে ঝিলের পানি। পানির রঙ কালচে হয়ে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। দর্শনার্থীসহ আশেপাশের বসবাসকারীরা অতিষ্ঠ হচ্ছেন। পানিতে ভাসছে ময়লা আবর্জনা।
পানির দুর্গন্ধ বেড়ে যাওয়ায় কমে আসছে দর্শনার্থীর সংখ্যাও। ফলে হাতিরঝিলের পানিতে মশার বংশবিস্তার বেড়েছে। এতে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এদিকে ঢাকা ওয়াসার মতো হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এরই মধ্যে হাতিরঝিলের দায়িত্বে থাকা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। তবে সেই প্রস্তাবে সায় দেয়নি রাজউক। সায় না পেলেও তৎপর রয়েছেন ডিএনসিসি’র মেয়র। হাতিরঝিলের বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করছেন তিনি। ডিএনসিসি’র প্রস্তাবের পর রক্ষণাবেক্ষণে জোর দিচ্ছে রাজউক। নগরবিদরা বলছেন, দুই পক্ষের টানাটানিতে থমকে যাবে উন্নয়ন প্রকল্প। যে সংস্থাটি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে তাদের কাছেই হাতিরঝিল রাখতে হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করা যেতে পারে। দায়িত্ব হস্তান্তর করলেই উন্নয়ন হবে না। পানি পরিষ্কার হবে না। প্রয়োজন সদিচ্ছা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন মাধ্যমে হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। যদিও এখনো কোনো চিঠিপত্র রাজউকের কাছে আসেনি। ডিএনসিসি চাচ্ছে ঢাকার ওয়াসা থেকে যেভাবে খালের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। ঠিক সেভাবে রাজউকের কাছ থেকে হাতিরঝিলের দায়িত্ব নিতে চায়। তবে রাজউক এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। হাতিরঝিলের সৌন্দর্য রক্ষায় বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজউক। ঈদের পরেই নতুন উদ্যোগে মাঠে নামবে সংস্থাটি। ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে পানি দুর্গন্ধ রোধে কাজ করবে তারা। আগামী জুন থেকে শুরু হচ্ছে ঝিলের পানি পরিশোধনের কাজ। এ বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, প্রকল্প এলাকার আশেপাশের আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনার বর্জ্য সরাসারি হাতিরঝিলের পানিতে মিশে যাচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত পানি দূষিত হচ্ছে। পানির তলদেশে ভারী ময়লার স্তূপ জমে আছে। এতে পানি প্রবাহে বিঘœ ঘটছে। ফলে পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। ক্রমেই এর মাত্র বাড়ছে। শুষ্ক মৌসুমে যা প্রকট আকার ধারণ করে। তবে বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ থাকায় দুর্গন্ধ ও দূষণের মাত্রা কিছুটা কমে আসে। এর আগে এখানকার পানির নমুনা সংগ্রহ করে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় ল্যাবরেটরিতে গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়েছে। সূত্র বলছে, পরীক্ষায় হাতিরঝিলের পানি মাত্রারিক্ত দূষিত ও জলজপ্রাণের জন্য অনুপযোগী বলা হয়েছে।
নগরবিদরা বলছেন, দ্রুতই হাতিরঝিলের পানি দূর্ষণ কমাতে হবে। অন্যথায় পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। হাতিরঝিল একটি উন্নয়ন প্রকল্প, এটাকে গতিশীল রাখতে হবে। সরকার উন্নয়নের লক্ষ্যে যেকোনো সংস্থাকেই এর দায়িত্ব দিতে পারে।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এবং হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক এএসএম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, হাতিরঝিল নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কোনো প্রস্তাব আমরা পাইনি। আমরা হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণ করছি। আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঝিলের পানি দুর্গন্ধমুক্ত করতে আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। ঝিলের পানি শোধন ও দুর্গন্ধমুক্ত করতে প্রকল্পটির কাজ ইতিমধ্যে প্রায় শেষের দিকে আছে। শিগগিরই এ প্রকল্পের মাধ্যমে হাতিরঝিলের পানি দুর্গন্ধমুক্ত করা হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা কমাতে আমার ওয়াসার খালগুলোর দায়িত্ব নিয়েছি। সেসব খাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। হাতিরঝিলে দুর্গন্ধ ও দূষণ বেড়েছে। আমরা চাচ্ছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এসব রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারে তাহলে খালগুলোর মতোই হাতিরঝিলসহ ঢাকায় থাকা অন্য জলাশয়গুলোরও দায়িত্ব নিবো। নগরবাসীকে দৃষ্টিনন্দন ও দূর্ষণমুক্ত হাতিরঝিল করে দিবো।