গাজী আবু বকর : দীর্ঘদিনের স্বেচ্ছাচারি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকার ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলার ১২০ টাকা দরে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮০ কোটি টাকার বিদেশি ঋণের বোঝা জাতির কাঁধে চাপিয়ে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়েছেন। দেশের অর্থনীতির যখন এমন ভঙ্গুর অবস্থা ঠিক সেই মুহূর্তে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশকে বড় অঙ্কের ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা ও জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গে পৃথক বৈঠকে এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় আসে তখন সরকারের বিদেশি ঋণ ছিল ২১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। যা তৎকালীন প্রতি ডলার ৬৯ টাকা দরে দেশীয় মুদ্রা টাকার অঙ্কে ছিলো ১ লাখ ৪৬ হাজার ২১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ৩৮ বছরে যে পরিমাণ ঋণ করেছে বিগত সরকারগুলো, আওয়ামী লীগ সরকার মাত্র ১৫ বছরে তার চারগুণ ঋণ করেছে।সে হিসাবে ১৫ বছরে বেড়েছে ৮২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।
চলতি বছরের জুন শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলার। গত ডিসেম্বরের শেষে সরকার ও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণে স্থিতি ছিল ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসেই প্রায় ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সাবেক সরকারের যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা না থাকায় দেশি উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া হয়েছে। যদিও বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেওয়াকে সব সময় স্বাগত জানান অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। গত ১৫ বছরে অনেক বিদেশি ঋণও নেওয়া হয়েছে। তবে এসব ঋণের বেশির ভাগই নেওয়া হয়েছে দর-কষাকষি ও বাছবিচারহীনভাবে; যা সরকারের দায়দেনা পরিস্থিতিতে চাপ বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ৮৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন সরকারের ও বাকি ২০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতের দায়। বেসরকারি খাতের ১১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন স্বল্পমেয়াদি ও ৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ।
গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ ছিল ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের অক্টোবর শেষে ২১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন। অর্থাৎ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আগের ৯ মাসে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ কমেছে ৭০৬ মিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত মার্চে দেশের মোট বিদেশি ঋণ কিছুটা কমেছিলো। কিন্তু ডলার সংকটসহ নানা কারণে বিদেশি সংস্থাগুলো থেকে নেওয়া ঋণের ফলে বিদেশি ঋণ ফের বেড়েছে। গত মার্চে বিদেশি ঋণ কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছিলো ৯৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে ঋণ আবার বেড়ে ১০৪ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপি আর্থিক সংকট তৈরি হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার বেড়ে যায়। এতে বিদেশি ঋণে সুদের হার বেড়ে যায়। পাশাপাশি দেশের টাকার বড় ধরণের অবমূল্যায়ণের ফলে বিপাকে পড়ে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ নেওয়া ব্যবসায়ীরা। এজন্য বিদেশি ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধে মনোযোগী হয় তারা। কিন্তু ডলারের দর স্থিতিশীল হওয়া ও দেশে ঋণের সুদের হার বাড়তে থাকায় ব্যবসায়ীরা ফের বিদেশি ঋণ নিতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৩ মাসের ব্যবধানে দেশের সরকারি খাতের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। গত মার্চে সরকারি খাতের বিদেশি ঋণ ছিলো ৭৯ বিলিয়ন ডলার। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ঋণ বেড়েছে ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।
জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, দেশের প্রয়োজন তাই বিদেশি ঋণ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই ঋণ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগেরও পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যাতে রপ্তানি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে। এর সঙ্গে রেমিট্যান্সের দিকেও নজর দিতে হবে। অর্থাৎ ঋণ বাড়লেও পরিশোধ করার সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে সরকারকে। তাহলেই এই ঋণ কোন শঙ্কা তৈরি করবে না। এছাড়া বাংলাদেশের বর্তমানে যেই ঋণ আছে তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ব্যয়বহুল প্রকল্প, সাবেক সরকারের ঋণের স্ফীতি ও পুঁজি পাচার নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত করেছে কিংবা বাস্তবায়ন করছে তার অন্যতম: পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। কিন্তু এসব করতে গিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দুঃখজনক হলো, এসব ঋণের অর্থে চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যখন সম্পন্ন হবে তখন প্রকল্পগুলোর আয় থেকে ঋণের কিস্তির অতি সামান্য অংশই পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ কিংবা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এখনো সফট লোন পাওয়া গেলে আমরা নিতে আগ্রহী হই। কিন্তু আমাদের বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এখন সাপ্লায়ারস ক্রেডিট। সাপ্লায়ারস ক্রেডিটের অসুবিধে হলো জোগানদাতারা প্রকল্পের প্ল্যান্ট, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ঋণ হিসেবে দেওয়ার সময় প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বাজার দামের চাইতে অনেক বেশি দাম ধরে ঋণের পরিমাণকে বাড়িয়ে দেয়। উপরন্তু, সাপ্লায়ারস ক্রেডিটের সুদের হারও সফট লোনের সুদের হারের চাইতে বেশি, ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও কম থাকে। আরও গুরুতর হলো, সাপ্লায়ারস ক্রেডিটে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ব্যবসায়ী ও আমলাদের মার্জিনের হার অনেক বেশি হয়ে থাকে। সে জন্য বাংলাদেশের মেগা-প্রজেক্টগুলোর ব্যয় বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক হয়ে যাচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে সাপ্লায়ারস ক্রেডিটের প্রতি অতিমাত্রায় ঝুঁকে পড়েছে বাংলাদেশ।
এসব সমস্যার সমাধনে সরকারকে দুর্নীতি, পুঁজি-লুণ্ঠন এবং পুঁজিপাচারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন মইনুল ইসলাম। এ জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে অবিলম্বে কঠোরভাবে হুন্ডি ব্যবস্থাকে দমন। কারণ, হুন্ডি পদ্ধতিতে বিদেশে থেকে যাওয়া ডলার বা অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা কেনার ক্ষেত্রে চাহিদার প্রধান অংশটাই আসছে দুর্নীতিবাজ আমলা ও রাজনীতিবিদ এবং ব্যাংকঋণ লুটেরাদের পক্ষ থেকে। কঠোরভাবে দুর্নীতি দমন না করলে পুঁজিপাচার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
এদিকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদেশী ঋণ প্রতিশ্রুতির মধ্যে কিছু রয়েছে স্বল্পমেয়াদি আর কিছু আছে দীর্ঘমেয়াদি। উন্নয়ন সহযোগীদের পাশাপাশি নতুন সরকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, চীন প্রভৃতি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকেও ভালো অঙ্কের বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি পেয়েছে। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থা দুর্বল। তাই সংকট উত্তরণে এ মুহূর্তে বিদেশি সহায়তা প্রয়োজন। সার ও জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় মেটাতে প্রয়োজন অর্থের। বিদ্যুৎ খাতে বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া পড়েছে। এসব দেনা তাৎক্ষণিকভাবে মেটানোর জন্য প্রয়োজন বাজেট সহায়তা। সুতরাং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে দর-কষাকষির ক্ষেত্রে সরকারকে বাজেট সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চারটি উন্নয়ন সহযোগী ও একটি দেশ বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত ১০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৩০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এর পরিমাণ ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলার, বিশ্বব্যাংক ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন বা ১১০ কোটি ডলার ও যুক্তরাষ্ট্র ২০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জানা গেছে, এর মধ্যে কিছু প্রতিশ্রুতি আছে বাজেট সহায়তা এবং কিছু আছে প্রকল্পসহ অন্যান্য সহায়তা।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখন নগদ সহায়তা দরকার। প্রকল্প সহায়তা পরে হলেও চলবে। বর্তমানে যে আর্থিক সংকট আছে সেটা নিরসন করতে হলে বাজেট সহায়তা দরকার, যাতে তাৎক্ষণিকভাবে চাহিদা পূরণ করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছরের মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলার দিতে পারবে। যদি তাই হয়, তাহলে এটা হবে ইতিবাচক। তবে এই সহায়তা পেতে হলে সরকারকে কিছু সংস্কারের শর্ত পালন করতে হবে। আমরা এখন পর্যন্ত অর্থের প্রতিশ্রুতি শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু এই টাকা পেতে গেলে কোন খাত কী ধরনের সংস্কার করতে হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।’
বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘বাজেট সহায়তা পাওয়া গেলে বর্তমানে অর্থনীতিতে যে গভীর সংকটে রয়েছে, তা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে সরকার।’ তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে সার আমদানি করতে হবে, জ্বালানি তেল আনতে হবে, বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে হবে। এগুলো সমাধানের জন্য বাজেট সহায়তা দরকার। সেটা যদি করা যায়, তাহলে বলতে হবে এই সরকার একটা ভালো উদ্যোগ নিয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার বাংলাদেশকে নতুন করে ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। চলতি অর্থবছরের মধ্যে এই টাকা বাংলাদেশকে দেওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে প্রতিশ্রুত ঋণের মধ্যে কিছু হবে বাজেট সহায়তা। কিছু প্রকল্প খাতে দেওয়া হতে পারে বলেও আভাস দেন তিনি।
আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমানে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চলমান। এর মধ্যে তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আরও তিনটি কিস্তি পাওয়ার কথা। চলমান ঋণ কর্মসূচির বাইরে সংস্থাটির কাছে আরও ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার চেয়েছে সরকার। এ নিয়ে আলোচনা করতে চলতি মাসের শেষে আইএমএফের একটি ছোট প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আইএমএফের কাছে বাড়তি আরও ৩ বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে। এর জন্য আলোচনার দরকার আছে। আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তার বাইরে নতুন করে বাড়তি ঋণ চাওয়া হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।’
গত সপ্তাহে সচিবালয়ে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের রিজিওনাল হাব ম্যানেজার নাসিস সোলাইমানের সঙ্গেও বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগামী তিন বছরে একটা প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশকে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি)। বিভিন্ন খাতের জন্য এ অর্থ দেবে তারা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটসহ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে এ ঋণ দেওয়া হবে। প্রান্তিক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণেও ঋণের অর্থ ব্যয় করা যাবে। এ ছাড়া জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতেও ঋণ দেবে তারা।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিংয়ের নেতৃত্বাধীন একটি দলের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বৈঠক করেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে এডিবি। সংস্থাটি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি খাতে সংস্কারের জন্য দেবে ৭০ কোটি ডলার। এটা পাওয়া যেতে পারে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে।
যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলারের বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিচ্ছে। সম্প্রতি সে দেশের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়েছে। স্বাস্থ্য, সুশাসন, মানবিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি এবং মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এ অর্থ কাজে লাগানো হবে।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন ও জাপানের কাছ থেকে বাড়তি বৈদেশিক সাহায্যের আশ্বাস না মিললেও অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা বলে গেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে তারা আগ্রহী এবং তাদের দেশের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলো অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক ঊর্ধ্বতন পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা পাওয়া গেলে সামষ্টিক অর্থনীতির চাপ মোকাবিলা করা সহজ হবে। তবে সরকারকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সচল রাখতে হবে। অর্থনীতিতে যেসব সংকট রয়েছে তা মোকাবিলা করতে হবে। যদি তা না করা হয়, তাহলে শুধু বিদেশি সহায়তা দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।’